বাংলাদেশের মানুষের নাগরিক অধিকার ‘অবদমিত’ বলে মনে করে নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সিভিকাস। দেশে নাগরিকদের অবস্থাকে ‘নিপীড়িত’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। বৈশ্বিকভাবে প্রকাশিত সংস্থাটির ‘পিপল পাওয়ার আন্ডার অ্যাটাক ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে টানা পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের এই অবস্থান উঠে এলো।
বিশ্বের ১৯৬টি দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। নাগরিক অধিকার যাচাই করে ৫টি ক্যাটাগরিতে এসব দেশকে ফেলা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা- এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকারের অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়েছে।
অধিকারের দিক বিবেচনায় পাঁচটি ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে- উন্মুক্ত, সংকীর্ণ, বাধাগ্রস্ত, অবদমিত ও বন্ধ। এ বছরও বাংলাদেশ পড়েছে ‘অবদমিত’ ক্যাটাগরিতে।
সিভিকাস বলছে, বাংলাদেশ নাগরিক স্বাধীনতা হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার সমালোচকদের টার্গেট করে এবং কারারুদ্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমতকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। এই বিধিনিষেধগুলো নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সিভিকাসের মতে, হাসিনা সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে মানবাধিকারকর্মীদের টার্গেট করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানকে ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা লঙ্ঘনের জন্য চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়।
সিভিকাস আরও বলেছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার অনলাইন সমালোচকদের চুপ করানোর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। ডিএসএ আইনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সমালোচনা করেছে।
সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত ১০ আগস্ট বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার ডিএসএর পরিবর্তে সম্প্রতি পাস হওয়া সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট (সিএসএ) ব্যবহার করবে। মানবাধিকারকর্মীরা সিএসএকে ডিএসএর মতোই দমনমূলক বলে মনে করেছেন, যা বর্তমানে কার্যকর রয়েছে।
নাগরিক অধিকার ‘অবদমিত’ থাকার জন্য বাংলাদেশের সমালোচিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। গত ২২ জুলাই সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ রিপোর্ট করেছে ৬২ শতাংশ মানবাধিকারকর্মী তাদের কাজের সাধারণ পরিবেশকে ‘খুব অনিরাপদ’ বা ‘অনিরাপদ’ হিসাবে বিবেচনা করে।