টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার আসামি সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি। কারাগারে আছেন কয়েক বছর ধরে। গত আগস্ট মাসে এই মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশনা দিয়েছিলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ।
কিন্তু এই নির্দেশনা গোপন রেখে হাইকোর্টে চাওয়া হয় ওই আসামির জামিন। গত ২০ নভেম্বর মুক্তিকে জামিন দেন বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এই জামিন আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পর বুধবার (২২ নভেম্বর) মুক্তি পান হত্যা মামলার এই আসামি। এদিকে এই আসামির মুক্তিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে সরকারের শীর্ষ মহলে। কীভাবে এই আসামি জামিনে মুক্তি পেল তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, বুধবার দুপুরে বিষয়টি জানার পর দেখলাম মামলাটি টাঙ্গাইল জেলার হলেও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ঢাকার জেলার নাম উল্লেখ করা রয়েছে। শুধু জেলার নাম ভুলই নয়, আসামির নামও ভুল লেখা হয়েছে। ছিল না কোনো টেন্ডার নম্বর।
তিনি বলেন, জামিন চাইতে পারেন যেকোনো আসামি। কারণ এটা আসামির অধিকার। জামিন পেতেও পারেন। তবে এভাবে ভুল তথ্য দিয়ে জামিন হাসিল করাটা কতটা ন্যায়সঙ্গত।
এদিকে এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের কাছে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এতে জামিন স্থগিত চাওয়া হয়েছে। গতকাল আবেদনটি শুনানির জন্য পেশ করা হলে, মুক্তির আইনজীবী আদালতকে জানান যে আসামি কারামুক্তি পেয়েছেন। এরপরই আজ বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১ টায় এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছে আদালত।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, আপিল বিভাগ এই আসামিকে জামিন না দিয়ে মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল বিচারিক আদালতকে। কিন্তু এই তথ্য গোপন রেখে হাইকোর্ট থেকে জামিন হাসিল করেছে আসামিপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সহিদুর রহমান মুক্তি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাই। ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। পরে পুলিশ এই চারজনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। বর্তমানে এই মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে।