আপিল নিষ্পত্তি করে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। তবে রায় ঘোষণার পর দেড় বছর পার হলেও বিচারপতিদের স্বাক্ষর না হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি। ফলে খালাস পেয়েও কারাগারে দিন কাটছে নিরপরাধ মো. আহাদ আলীর।
সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে কারাবন্দী আহাদ আলীর স্ত্রী মেহেরুন্নেসা প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের কাছে আবেদন করেছেন। এতে ঘোষিত রায় ও আদেশে স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে খালাসপ্রাপ্ত স্বামীকে জেলখানা থেকে মুক্তির সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন মেহেরুন্নেসা।
আবেদন সূত্রে জানা গেছে, মো. আহাদ আলী একটি হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করলে ক্রিমিনাল মিস মামলায় জারি করা রুল অ্যাবসুলেট ঘোষণা করে আসামিকে খালাস দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি এস. এম. এমদাদুল হক এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল এ রায় ঘোষণা করেন। কিন্তু রায়ে বিচারপতিদের চূড়ান্ত স্বাক্ষর না হওয়ায় এখনো আহাদ আলী জেলাখানায় আটক রয়েছেন।
হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েও শুধুমাত্র চূড়ান্ত রায় প্রকাশে বিলম্বের কারণে আহাদ আলী রায় ঘোষণার তারিখ থেকে হিসাব করলেও এক বছর ৭ মাস ধরে কারাভোগ করছেন। মামলায় নিযুক্ত আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজ মোহাম্মদ শেখ ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগেও কোনো আপিল দায়ের করা হয়নি।
বিচারিক আদালতের রায়
বগুড়ার আদমদীঘিতে সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধ ও পায়ের রগ কেটে হত্যার ঘটনায় তার স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দেন রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া এ মামলার তিন আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের রায় হয়।
২০১৬ সালে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম আহম্মেদ খলিলুর রহমান এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন- বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার তালশন গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে সোহেল ইবনে করিম (৩৫)। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- বগুড়ার ফুলবাড়ি উপজেলার সরকারপাড়া গ্রামের মনিরুজ্জামান সরকারের ছেলে শাকিল সরকার (২৮), আদমদীঘি উপজেলার সন্তোষ চন্দ্র ঘোষের ছেলে সেনগুপ্ত ঘোষ (৩৫) এবং দুপচাঁচিয়া উপজেলার বাটাহারা গ্রামের খয়বর আলী ফকিরের ছেলে আহাদ আলী (৪০)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ভিকটিম শিরিন আক্তার (২৫) সোহেল ইবনে করিমের তালাক দেওয়া স্ত্রী ছিলেন। নানা কারণে সোহেল তাকে হত্যার হুমকি দিতেন। ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে আসামিরা একটি মাইক্রোবাসে করে আদমদীঘি উপজেলার মুরইল গ্রামে শিরিন আক্তারের বাবা আজিজার রহমানের বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় বাড়িতে তার বাবা-মা না থাকার সুযোগে আসামিরা তাকে জোর করে বাড়ির পেছনে নিয়ে যায়।
এরপর তারা তাকে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় তার দুই পায়ের রগও কেটে দেওয়া হয়। এতে শিরিন আক্তার মারা গেছেন ভেবে আসামিরা তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই সময় শিরিন আক্তার মারা না গেলেও চিরদিনের মতো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে ২০১৩ সালের ২৬ আগষ্ট শিরিন আক্তার মারা যান। এ ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদমদীঘি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হলে পুলিশ তাদের আটক করে।
প্রথমে মামলাটি বগুড়া জজ আদালতে চলছিল। পরে এ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বগুড়া থেকে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এ মামলায় আদালত মোট ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। পরে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে আদালত এ রায় দেন।