ওয়ারিশ সম্পদ তথা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পারিবারিক সম্পদ সবাই বণ্টননামা দলিলের মাধ্যমে নিবন্ধন করিয়ে নামজারি করে নিলে দেশে ভূমিবিষয়ক মামলা-মোকদ্দমা অনেক কমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপির মাসিক পর্যালোচনা সভায় বুধবার (২২ নভেম্বর) ভূমিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেছেন, দেশে পারিবারিক বিরোধের মূলে রয়েছে জমিজমা। ওয়ারিশরা সাধারণত জমি রেজিস্ট্রার্ড বণ্টন দলিল না করে মৌখিকভাবে, সাধারণ কাগজে বণ্টন করে ভোগ করে থাকেন। এর ফলে জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলে জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ থেকে পারিবারিক বিরোধের শুরু হয়। পারিবারিক বিরোধ থেকে সামাজিক নানা ধরনের ঝগড়াবিবাদ, মারামারি, খুন এবং দীর্ঘ মেয়াদে মামলা-মোকদ্দমার সূত্রপাত হয়। এ সমস্যা সমাধানে প্রতিটি পরিবারকে জমির বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রার্ড বণ্টন দলিল করতে হবে। তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে ভাই-ভাই কিংবা ভাই-বোনসহ বেশির ভাগ পরিবারের মধ্যে বিরোধের অন্যতম কারণ, রেজিস্ট্রি বণ্টননামা দলিল ছাড়া মৌখিকভাবে কিংবা সাধারণ কাগজে লিখে সম্পত্তি বণ্টন বা ভাগ করা। পরবর্তী সময়ে সম্পদের মূল্যবৃদ্ধি কিংবা নানা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে পারিবারিক আপস ভেঙে যায়। জন্ম নেয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বিরোধ।
রেজিস্ট্রি বণ্টননামার ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন ভূমিমন্ত্রী। এছাড়া পারিবারিক সম্পদ বণ্টনে বোনের অধিকার রক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ রাখার ব্যাপারেও গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী।
একাধিক ওয়ারিশ বা ক্রেতা যদি যার যার প্রাপ্য জমি নিজ নিজ নামে আলাদাভাবে দলিল করে তখন তাকে বণ্টননামা তথা বাঁটোয়ারা দলিল বলে। বণ্টননামা বা বাঁটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রি করে নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে নামজারি করতে হয়। বাঁটোয়ারা দলিল ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের মৌলিক প্রমাণ। বণ্টননামা দলিলের পর ওয়ারিশ সম্পত্তির নামজারি করাও গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া সভায় জানানো হয়, ২০২৫ সালের পর ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন সংক্রান্ত সব সেবা কার্যক্রমকে প্রকল্প মেয়াদের শেষে বুঝে নেওয়া, ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মনিটরিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে অনলাইন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এই কার্যক্রমের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। এই কার্যক্রম অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি’ আইবাস এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা’ জেমস কার্যক্রমের অনুরূপ।
অটোমেটেড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এএলএএমএস-অ্যালামস) কার্যক্রম পুরোদমে চালু হলে আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে ভূমি ব্যবস্থাপনায় তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, ডিজিটাল সার্ভিস বাস্তবায়নে ডিজিটাল পদ্ধতি, আইন, বিধি, নীতি ও ম্যানুয়াল হালনাগাদ করে সময়োপযোগী করা, ডিজিটাল ভূমিসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে মাঠ পর্যায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং স্মার্ট ভূমিসেবা সম্পর্কে নাগরিকের জিজ্ঞাসার উপযুক্ত সমাধান দেওয়া সম্ভব হবে বলে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।