অসুস্থ কারাবন্দি যশোর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মো. আমিনুর রহমানকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেরি লাগানো অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়ার ঘটনা হাইকোর্টের নজরে এনেছেন বিএনপির আইনজীবীরা।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি নজরে আনা হয়।
এ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে পড়ে শোনান সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। আদালত এ বিষয়ে আবেদন আকারে আসতে বলেছেন।
এ সময় ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ বিএনপির আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালের মেঝেতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক ব্যক্তি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দুই পা ভাঁজ করে শুয়ে আছেন। ডান্ডাবেড়ি থাকাতে দুই পা সোজাও করতে পারছে না। এক হাতে ঝুলছে হাতকড়া। অন্য হাতে ইনজেকশনের ক্যানোলা। দুই পায়ের মাঝখানে ঝুলছে ক্যাথেডার। রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব সেখানে জমা হচ্ছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তির এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে, যা রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে।
ছবির ওই ব্যক্তির নাম আমিনুর রহমান মধু। তিনি যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি। এছাড়া তিনি সদর উপজেলার আমদাবাদ ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক।
অসুস্থ আমিনুরের পরিপূর্ণ চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের। আর কারা পুলিশের এমন অমানবিক কাণ্ডে মর্মাহত তার পরিবার ও স্বজনরা। অন্যদিকে এটিকে সমীচীন নয় বলে অভিমত জানান আইনজীবীরা।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর রাতে যশোর-নড়াইল মহাসড়কে দুটি বাস থেকে ককটেল, লাঠি ও পেট্রোল জব্দের ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ ৮৭ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় আসামি যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধু।
এরপর হরতাল–অবরোধে নাশকতার আরও দুই মামলার আসামি হন তিনি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে যান। কিন্তু ২ নভেম্বর সদর উপজেলার আমদাবাদ গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান মধু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
পরদিন ১৩ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও ডান হাতে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। আবার ওই হাতে একগুচ্ছ দড়ি প্যাঁচানো।
ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া এমনভাবে লাগানো যাতে সামান্য নড়েচড়ে বসারও কোনো সুযোগ নেই কেবল দুই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পুলিশের আপত্তির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বিছানা পর্যন্ত দেয়নি। যে কারণে আমিনুর রহমান মধুকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করা হয়। তার বাম হাতে ক্যানোলা লাগানো। সেখানে স্বজনদের তার সান্নিধ্যে যেতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি সময়মতো ওষুধ সেবন পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তার স্বজনেরা।