আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণসহ সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করতে বার কাউন্সিল আইন সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে এ নির্দেশ প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে।
গুরুতর পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত এক আইনজীবীর আপিলের রায়ে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এ নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ। বার কাউন্সিল আইন ও বিধি এবং পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার বিধিমালা পর্যালোচনা করে এ রায় দিয়েছেন আদালত।
রায়ে আদালত বলেছেন, বার কাউন্সিল আইন ও বিধিতে পেশাগত অসদাচরণের কোনো সংজ্ঞা নেই। পেশাগত অসদাচরণের সংজ্ঞা না থাকলেও এ ধরনের আনিত অভিযোগে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক অনবরত আইনজীবীরা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন। যেখানে পেশাগত অসদাচরণের সংজ্ঞাই নেই সেখানে এ ধরনের অভিযোগে আইনজীবীদের শাস্তি প্রদান কতটা যুক্তিযুক্ত? এ কারণে বার কাউন্সিলের উচিত আইনজীবীদের শাস্তি প্রদানের পূর্বে পেশাগত অসদাচরণের বিষয়ে সংজ্ঞা নিরূপণ করা।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে ইনটিমেশন ফরমে শুরুতেই ঘোষণা দিয়ে বলতে হয় তিনি অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত নেই। কিন্তু এই ঘোষণা কতটা বাস্তবসম্মত। বার কাউন্সিল আইনের ২৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অ্যাডভোকেট হিসাবে অন্তর্ভুক্তির জন্য বয়স ২১ বছর পূর্ণ হতে হবে। কিন্তু কত বছর বয়সের পর আর আইনজীবী হওয়া যাবে না সেই বিষয়ে কোনো বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া নেই আইনে। এ কারণে অন্য কোনো পেশা বা ব্যবসায় নিয়োজিত থাকলেও একজন ব্যক্তি আইনজীবী হওয়ার লক্ষ্যে শুরুতেই বার কাউন্সিলের ইনটিমেশন ফর্মে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছেন। সেজন্য ইনটিমেশন ফর্মে এই ঘোষণা দেওয়ার শর্ত কতটা বাস্তবসম্মত, তা বার কাউন্সিলকে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
আদালত বলেন, বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আছেন যারা ওকালতি পেশার পাশাপাশি অন্য কোনো পেশায় বা ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছেন। আইন পেশার পাশাপাশি অন্য পেশায় নিয়োজিত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বার কাউন্সিল কি আদৌ কোন ব্যবস্থা নিয়েছে, নেয়নি। হয়ত কারো অভিযোগ পেয়ে এ ধরনের পেশাগত অসদাচরণের কারণে কাউকে কাউকে শাস্তি দিয়েছে, তবে সবাইকে নয়। আমরা মনে করি এ ক্ষেত্রে একটা হ য ব র ল অবস্থা বিরাজ করছে। তাই এসব ক্ষেত্রে বার কাউন্সিল আইন ও বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ আইনজীবীদের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার রয়েছে বলে মনে করে হাইকোর্ট।
রায়ে হাইকোর্ট আরও বলেছেন, আইনজীবী পেশায় আসার জন্য প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক আইনজীবীকে সনদ প্রদান করছে বার কাউন্সিল। সনদধারীদের সবাই যে আদালতে প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ার তা নয়। নন প্র্যাকটিসিং ল’ ইয়ারও রয়েছেন। কারা প্র্যাকটিসিং ল’ ইয়ার এবং কারা নন প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ার সেই বিষয়েও বার কাউন্সিলের একটা মনিটরিং ব্যবস্থা থাকা দরকার।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সৈয়দপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন বাবু ক্ষিতিশ চন্দ্র রায়। ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি নীলফামারী জেলা বারের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। শিক্ষকতা পেশায় থাকলে তিনি সনদ সাময়িক স্থগিত রাখার কোন আবেদন বার কাউন্সিলে করেননি।
এ কারণে তার বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ আনে এক ব্যক্তি। সেই অভিযোগে তাকে বার কাউন্সিল আইনের ৩২(১) বিধান অনুযায়ী চিরতরে আইন পেশা থেকে বহিষ্কার করা হয়। বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন।
ওই আপিল আংশিক মঞ্জুর করে হাইকোর্ট তার আইনজীবী সনদ ফিরিয়ে দেয়। অর্থাৎ এখন থেকে ওই ব্যক্তি আইন পেশায় নিয়োজিত হতে পারবেন বলে জানান তার আইনজীবী মো. আব্দুল হক।
এই মামলায় আদালতে অ্যামিকাস কিউরি হিসাবে বক্তব্য দেন বার কাউন্সিল সদস্য অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের কমপ্লেইন্ট অ্যান্ড ভিজিলেন্স কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ (রাজা) সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বার কাউন্সিলের নির্বাচিত কমিটির পক্ষ থেকে একটি রিকোয়ারমেন্ট দিয়েছি আদালতকে। পরে আদালত আমাদের নির্দেশনা দেন যেন আমরা আইন পরিবর্তন করি। এই আইন পরিবর্তন করার জন্য বার কাউন্সিলে ল রিফর্ম কমিটি আছে। তারা এটি করে নির্বাহী কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।’