দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকে ‘ডামি প্রার্থী’ লেখায় স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করা হয়েছে।
ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমানের আদালতে গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) মামলাটি দায়ের করেন সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এস এম আনোয়ারুল করিম ফারুক।
মামলায় দৈনিক ‘ফেনীর সময়’ পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ও প্রধান প্রতিবেদক গোলাম আজম আরিফ ওরফে আরিফ আজমকে বিবাদী করা হয়েছে বলে জানান আদালতের পেশকার শাহনুর আলম।
মামলার এজাহারে যা বলা হয়
গত ১৩ ডিসেম্বর বাদীর বিরুদ্ধে আসামিরা অপমানসূচক ও মানহানিকর সংবাদ সম্বলিত সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করেন। আসামিদের ছাপানো মানহানিকর ও অপমানসূচক প্রতিবেদনে বাদী মানসিক এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বাদী কোনো রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে ফেনী-২ সংসদীয় আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। তিনি ওই আসনের মোট ভোটারের মধ্যে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এবং বৈধ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কিন্তু আসামিরা তাদের পত্রিকায় ‘আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী’ উল্লেখ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানহানিকর ও অপমানসূচক বক্তব্য প্রকাশ করে বাদীকে সামাজিকভাবে হেয় করেছে। আসামিরা অসত্য সংবাদ পত্রিকায় প্রচার করে বাদীর ১০ দশ কোটি টাকার মানহানি ও ক্ষতি সাধন করেছে।
পেশকার শাহনূর আলম জানান, শুনানি শেষে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে রোববার (আজ) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
আইনজীবীদের প্রতিবাদ
এদিকে মিথ্যা ও মানহানিকর বক্তব্য ছাপানোয় পত্রিকাটির নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকালে আদালত প্রাঙ্গণে `ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিবাদী আইনজীবী বৃন্দ’ ব্যানারে প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক অ্যাডভোকেড সৈয়দ আবুল হোসেনের পরিচালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান।
সভায় সংসদ সদস্য প্রার্থী আনোয়ারুল করিম ফারুক ছাড়াও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেড এম শাহজাহান সাজু, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেড নাছির উদ্দিন বাহার, দিলীপ কুমার সাহা, আহসান কবির বেঙ্গল, রসিক শেখর ভৌমিক, গাজী তারেক আজিজ।
বক্তারা দাবি করেন, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আনোয়ারুল করিম ফারুক। তিনি ‘ডামি প্রার্থী’ নন। জেলা রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে বাছাইয়ে প্রার্থিতা বাতিল হলেও নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি।
এ নিয়ে গত বুধবার দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকায় তাকে ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবে সংবাদ প্রকাশ করায় আনোয়ারুল করিম ফারুকের সম্মানহানি হয়েছে।
পরে আইনজীবী আনোয়ারুল করিম ফারুক পত্রিকাটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন। এ সময় তার সঙ্গে প্রায় ডজনখানেক আইনজীবী জেলা প্রশাসকের কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের বক্তব্য
দৈনিক ফেনীর সময়ের সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, ফেনী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এস এম আনোয়ারুল করিম ফারুক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়েও তারা পাশাপাশি বসে ছিলেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ফেনী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত আরও বলেন, “অতীতের নির্বাচনগুলোতেও হেভিওয়েট প্রার্থীরা তাদের সঙ্গে ডামি প্রার্থী রাখতেন। ডামি প্রার্থীকে কি অন্য কোনো নামে অভিহিত করা যায়? আমার ও আমার পত্রিকার প্রতিবেদকের নামে দায়ের করা মামলাটি হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই না।”
ফেনী রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি শুকদেব নাথ জানান, সম্পাদক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে রুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে।