বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ চতুর্থ পর্বে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ একটি পদ্ধতিগত আইন। এ বিষয় থেকে খুঁটিনাটি অনেক কিছুই পড়তে হবে। বরাবরের মতো আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষায় এ আইন থেকে দুটি প্রশ্নের মধ্যে একটির উত্তর দিতে হবে। থাকবে ১৫ নম্বর।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে অবশ্যই সংজ্ঞাগুলো পড়তে হবে। এরপর ফৌজদারি আদালত, আটক, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, অপরাধ দমন, ধারা ১৪৪-১৪৬, এফআইআর, আমলযোগ্য মামলা, আমল অযোগ্য মামলা, অর্থাৎ ধারা ১৫৪-১৭৬, ফৌজদারি মামলা আমলে নেওয়ার পদ্ধতি, চার্জ গঠন (ধারা ২২১-২৪০), ফৌজদারি মামলার বিচার (ধারা ২৪১-২৪৫ ও ২৬৫এ-২৬৫এল), আপিল, রিভিশনের ক্ষমতা, জামিন, ফৌজদারি মামলা স্থানান্তর ও ধারা ৫৬১ক বিষয়গুলোসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ টপিক রয়েছে, যা ভালো করে পড়তে হবে। বেশির ভাগ সময়েই সমস্যামূলক প্রশ্ন এসব বিষয় থেকেই আসে। তাই এগুলো বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে।
যেভাবে অনুশীলন করতে হবে
পদ্ধতিগত আইন হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে ব্যবহারিক বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। যেমন গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ কত ঘণ্টা আটক রাখা যায়, আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর যদি তাকে গ্রেপ্তার করা না যায়, তাহলে বিচারের জন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, ১৪৪ ধারার কার্যধারাকে ১৪৫ ধারার কার্যধারায় রূপান্তর করা যায় কি, দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের পদ্ধতি, তদন্ত, অনুসন্ধান, ফৌজদারি মামলার তদন্তের ব্যাপারে পুলিশকে কেমন ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে—এমন পদ্ধতিগত প্রশ্ন খুঁজে খুঁজে পড়তে হবে। আগের বছরগুলো ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে এমন ধরনের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নই বেশি এসেছে। এ ছাড়া কিছু কিছু টপিক থেকে সমস্যামূলক প্রশ্ন আসতে পারে।
আরও পড়ুন: দণ্ডবিধি আইনের কৌশলী প্রস্তুতি
ফৌজদারি কার্যবিধি আইন থেকে গতানুগতিক প্রশ্নের পাশাপাশি টীকামূলক প্রশ্নও আসে। এ জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারেন, যেমন অপরাধ, নালিশ, তদন্ত, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট, তল্লাশি পরোয়ানা, হুলিয়া ও ক্রোক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নারাজি, পুলিশ ডায়েরি, আমলযোগ্য অপরাধ, আমল-অযোগ্য অপরাধ, অধিকতর তদন্ত, ফাইনাল রিপোর্ট, আসামির ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে রেহাই, সংক্ষিপ্ত বিচার, চার্জে ভুলের পরিণতি, অব্যাহতি ও বেকসুর খালাসের পার্থক্য-সংক্রান্ত বিষয়গুলো ভালো করে পড়তে হবে।
পরীক্ষায় খাতায় যেভাবে লিখবেন
পরীক্ষার খাতায় ভালো নম্বর পেতে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। টীকামূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে এক বা দুই অনুচ্ছেদের মধ্যে উত্তর লিখতে হবে। প্রয়োজনে এক থেকে দেড় পাতা লিখলেই যথেষ্ট। সমস্যামূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় নির্দিষ্ট ফরমেটে (ঘটনা, বিচার্য বিষয়, সিদ্ধান্ত ও ব্যাখ্যা) লিখতে হবে। রচনামূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে বুলেট পয়েন্ট আকারে উত্তরগুলো গুছিয়ে লিখতে হবে। তবে ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে সঠিক ধারা, কেস রেফারেন্স ও উদাহরণ ব্যবহার করতে হবে। এতে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব।
আরও পড়ুন: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের প্রস্তুতির জন্য করণীয়
২০০৭, ২০১০, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের বার কাউন্সিল পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বারবার এসেছে। প্রশ্নটি হলো, চূড়ান্ত বিচারের পর বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত আসামিকে কি পুনরায় একই অপরাধের অভিযোগে বিচার করা যায়? এ ধরনের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারেন এভাবে—
একই অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে দুবার বিচার করা যাবে না, ফৌজদারি আইনের এটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি। ইংরেজি সাধারণ আইন থেকে এই নীতি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০৩ ধারায় সন্নিবেশিত হয়েছে। ওই ধারার বিধান অনুসারে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কোনো ব্যক্তিকে একবার দণ্ডিত বা খালাস প্রদান করলে ওই একই অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তিকে পুনরায় বিচার করতে পারবেন না। এই ধারায় ডবল জিওপ্রার্ডি বা দোবা দোষের নীতির প্রতিফলন হয়েছে। ফলে এখতিয়ারসম্পন্ন আদালত কোনো ব্যক্তিকে একবার দণ্ডিত বা খালাস প্রদান করলে ওই একই অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তি আবার বিচার করতে পারবেন না।
ব্যক্তি বনাম রাষ্ট্র, ৬৫ ডিএলআর (এইচসিডি) ৩৭৫, মামলাতে আদালত বলেন, পূর্বের দণ্ডাদেশ অথবা খালাস পরবর্তী-সময় একই বিষয় নিয়ে মামলা হলে তাতে বাধা সৃষ্টি করবে। তবে নতুন কোনো মামলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।
আরও পড়ুন: দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করতে পারেন। উত্তর লেখার সময় কেস রেফারেন্স দেওয়ার পর উদাহরণ লিখতে হয়। ওপরের উত্তরের সঙ্গে মিল রেখে উদাহরণ লিখতে পারেন এভাবে—
ক. একজন ভৃত্য। তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে বিচার করা হলো এবং তিনি খালাস পেলেন। এই আদেশ বহাল থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে একই ঘটনার ওপর আর চুরি বা অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা যাবে না। উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উপসংহারে আমরা বলতে পারি, কোনো ব্যক্তির বিচারে একবার সাজাপ্রাপ্ত বা খালাসপ্রাপ্ত হলে, একই অপরাধের জন্য তাঁকে আবার বিচারের সম্মুখীন হতে হয় না। এটি ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি।
এভাবে পরীক্ষার খাতায় গুছিয়ে লিখতে পারলে আশা করি লিখিত পরীক্ষায় সফল হবেন।