বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
অধিকাংশ সময়েই একটি প্রশ্ন আসে, সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ দেওয়ানি নাকি ফৌজাদারি। মজার বিষয় হলো, সাক্ষ্য আইন উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই এই আইনের গুরুত্ব বেশি। আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই। দুইটি প্রশ্ন আসবে, সেখান থেকে একটি প্রশ্নের অর্থাৎ ১৫ নম্বরের উত্তর দিতে হবে।
আদালতে কোনো মামলার সাক্ষ্য, প্রমাণ, জবানবন্দি, জেরা এ আইনের অধীনেই হয়ে থাকে। মামলার গতিপ্রকৃতি অনেকটাই নির্ভর করে এসব বিষয়ের ওপর। তাই আইনটি পড়ার সময়েও এসব বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পরীক্ষায় নানাভাবে এসব বিষয় থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। সাক্ষীকে জবানবন্দির সময় কেমন প্রশ্ন করা যাবে, কোন ধরনের প্রশ্ন করা যাবে না, জেরার সময় কীভাবে প্রশ্ন করতে হবে, বৈরী সাক্ষীদের ক্ষেত্রে করণীয়, প্রাথমিক সাক্ষ্য, মাধ্যমিক সাক্ষ্যসহ এ ধরনের বিষয়গুলো বারবার অনুশীলন করতে হবে।
যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে
আইনের সংজ্ঞা, অনুমান, ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা, স্বীকৃতি, দোষ স্বীকারোক্তি, যেসব ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে তলব করা যায় না তাদের বিবৃতি, বিশারদদের অভিমত, যেসব ঘটনা প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই, মৌখিক সাক্ষ্য, দালিলিক সাক্ষ্য, সত্যায়িত দলিলের প্রমাণ, প্রমাণের দায়িত্ব, সাক্ষীসমূহ, সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন, বৈরী সাক্ষীর সংশ্লিষ্ট ধারা, ব্যাখ্যা ও উদাহরণগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
আরও পড়ুন: ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন
আগের সালের প্রশ্ন পড়তে হবে
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, লিখিত পরীক্ষায় মূল আইন পড়ার পাশাপাশি কিছু ভালো মানের প্রশ্ন ব্যাংক অনুসরণ করতে পারেন। এতে একই বিষয়ের ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন পাবেন। শুধু তা–ই নয়, এসব প্রশ্ন ব্যাংকে আগের সালের সব প্রশ্ন একসঙ্গে দেওয়া থাকে। তাই আগের বছরের প্রশ্নগুলো অনুশীলন করা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের প্রস্তুতির জন্য করণীয়
এ ছাড়া কনফেশন–সংক্রান্ত বিষয়গুলো ভালো করে পড়তে হবে। যেমন আসামির থেকে প্রাপ্ত তথ্য যতটা প্রমাণ করা যায়, দোষ স্বীকারোক্তি অন্য অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যায় কি না, কোন অবস্থায় পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি বৈধ সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে।
লেখার কৌশল
স্বীকারোক্তি অংশ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হলো—দোষ স্বীকারোক্তি কি আসামির শাস্তি প্রদানের একমাত্র ভিত্তি হতে পারে?
এসব প্রশ্ন পরীক্ষায় এলে খুব বেশি লেখার দরকার নেই। রেফারেন্সসহ মূল কথাগুলো লিখতে পারেন। ওপরের প্রশ্নের উত্তরটি লিখতে পারেন এভাবে—বিচারিক দোষ বা অপরাধ স্বীকারোক্তি যদি আসামি স্বেচ্ছায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে প্রদান করেন এবং এটি যদি সত্য হয়, তাহলে অন্য সমর্থনমূলক সাক্ষ্য ছাড়া এর ওপর ভিত্তি করে স্বীকারোক্তি প্রদানকারীকে শাস্তি প্রদান করা যায়।
২০১৬ সালে রাষ্ট্র বনাম সুকুর আলী, ৬৮ ডিএলআর ১৫৫ মামলায় উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দেন, যখনই দেখা যায় আইনি সব বাধ্যতামূলক নিয়ম যথাযথভাবে মেনে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং দোষ স্বীকারটি স্বেচ্ছায় প্রদত্ত এবং সব ধরনের অনিয়মমুক্ত বলে ম্যাজিস্ট্রেট সন্তুষ্ট হয়েছেন, তখন উক্ত দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ওই আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করার একমাত্র ভিত্তি হতে পারে।
আরও পড়ুন: দণ্ডবিধি আইনের কৌশলী প্রস্তুতি
এ ধরনের প্রশ্নের সঙ্গে অনেক সময় সংযুক্তি প্রশ্নও থাকতে পারে। যেমন পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য কী বা প্রত্যাহার করা দোষ স্বীকারোক্তির ফলাফল কী হতে পারে? অর্থাৎ সাক্ষ্য আইনের ১৭-২৩ ও ৩১, সঙ্গে ২৪ থেকে ৩০ ধারা ভালো করে বুঝে বুঝে পড়তে হবে। এ অংশ থেকে সমস্যামূলক প্রশ্নও থাকে।
আরও পড়ুন: দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
সাক্ষ্য আইন থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পড়তে হবে। যেসব ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে ডাকা যায় না, মৃত্যুকালীন ঘোষণা ও গ্রহণযোগ্যতা, প্রমাণের পদ্ধতি, যেসব বিষয় আদালত দৃষ্টিগোচরে নেবেন, স্বীকৃত ঘটনার প্রমাণের দরকার নেই বলতে কী বোঝায়, দালিলিক সাক্ষ্য দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য বর্জিত হতে পারে কি, প্লি অব অ্যালিবাই, স্টোপেল, প্রমাণের দায়িত্ব কার ওপর বর্তায় বিষয়গুলো পড়তে ও লিখতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নই পড়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে লিখবেন। যদি ভেবে থাকেন এখন পড়ি, পরীক্ষার হলে লিখব; তাহলে মনে থাকবে না। তখন কিছুই লিখতে পারবেন না। তাই এখনই যেভাবে পড়বেন, ঠিক সেভাবেই লেখার অভ্যাস করুন।