আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা: তামাদি আইন বিষয়ে প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন
অ্যাডভোকেট রিয়াজুর রহমান

তামাদি আইন বিষয়ে প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন

আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ ষষ্ঠ পর্বে তামাদি আইন, ১৯০৮ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান

মামলা করার কারণ উদ্ভব হওয়ার কত দিনের মধ্যে মামলা করতে হবে—এ বিষয় নিয়েই তামাদি আইনের মূল আলোচনা। সাধারণত তামাদি আইনটি দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে আপিলসংক্রান্ত বিষয়গুলোয় তামাদির প্রয়োগ হয়। ফৌজদারি মূল মামলার ক্ষেত্রে তামাদির প্রয়োজন হয় না।

আরও পড়ুন: সাক্ষ্য আইনের প্রস্তুতির জন্য করণীয়

আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার সাতটি বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তামাদি আইন। তবে এ আইন থেকেও দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর করতে হবে একটি। প্রশ্নের মান ১৫ থাকবে।

গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও অনুচ্ছেদ

তামাদি আইন ১৯০৮ থেকে পরীক্ষার্থীরা চাইলেই ভালো নম্বর পেতে পারেন। এ জন্য বেশি পড়ারও দরকার নেই। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধারা—৩, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১২, ১৪, ১৯, ২৬, ২৮, ২৯ পড়লেই হবে। এ ছাড়া অনুচ্ছেদ থেকে ৯১, ৯২, ১০৩, ১১৩, ১১৪, ১২০, ১৪২, ১৫০, ১৫৭, ১৬৯, ১৮২ পড়তে হবে। তামাদি আইনের এ ধারা ও অনুচ্ছেদগুলোর বাইরে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা খুবই কম।

যেভাবে অনুশীলন করতে হবে

তামাদি আইন থেকে বেশ কিছু কৌশলী প্রশ্ন আসতে পারে। একই সঙ্গে রচনামূলক ও ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নও আসতে পারে। যেমন বিশেষ আইনের ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রযোজ্য কি না, তামাদি মওকুফের ক্ষেত্রে আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা, বিলম্ব মওকুফের নীতি ব্যাখ্যা করুন, আইনগত অক্ষমতা কী, তঞ্চকতা কী, বর্তস্বত্ব কী—বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন

এ ছাড়া তামাদি আইনের উদ্দেশ্য, তামাদি ও দীর্ঘকালীন ব্যবহারজনিত অধিকারের পার্থক্য, তামাদি আইনের তফসিল বর্ণিত অনুচ্ছেদ ১৪২ ও ১৪৪–এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী—এসব বিষয় জানতে হবে।

তামাদি আইনের সবচেয়ে আলোচিত ও চর্চিত বিষয় হলো ধারা ৩ ও ৫। একটি মূল মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য অন্যটি মূল মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ ছাড়া এ দুটি ধারার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। সেসব বিশদভাবে জানতে হবে।

আরও পড়ুন: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের প্রস্তুতির জন্য করণীয়

অনেকের মধ্যেই তামাদি আইনে বর্ণিত সুখাধিকার অর্জন ও সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্তি বিষয় নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন থাকে। সহজ করে মনে রাখবেন, সুখাধিকার হলো আপনার অধিকার, যেটা আপনি অর্জন করেছেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে কোনো পথ, জলস্রোত বা আলো–বাতাস টানা ২০ বছর ভোগ করলে সেটার ওপর আপনার অধিকার জন্মে। অন্যদিকে আপনার জমি অন্য কেউ টানা ১২ বছর ব্যবহার করলে সেই জমিতে ওই ব্যক্তির স্বত্ব তৈরি হয় এবং আপনার স্বত্ব নষ্ট হয়। অর্থাৎ একটি আপনি অর্জন করেন, অন্যটি আপনি হারান।

আরও পড়ুন: দণ্ডবিধি আইনের কৌশলী প্রস্তুতি

তামাদি আইন থেকে মাঝেমধ্যেই একটি প্রশ্ন আসে, যে ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের তামাদি দেওয়া হয়নি, সে ক্ষেত্রে করণীয় কী? এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, তামাদি আইনের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করে ৬ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

আরও পড়ুন: দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

তামাদি আইন ছোট হলেও গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। পরীক্ষার খাতায় নম্বর তোলার ক্ষেত্রে এটি যেমন সহায়ক হিসেবে কাজ করবে, তেমনই আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে পেশাগত জীবনেও আইনটির ব্যবহার করা যাবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো পড়ার পাশাপাশি কম আলোচিত ধারাগুলোও পড়তে হবে। তাহলে পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব।