দীর্ঘ বিচারিক কর্ম শেষে অবসরে গেলেন অধস্তন আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ.এইচ.এম. হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া (জিন্না)। সহকর্মীদের কাছে বিচার বিভাগের অহংকার, গৌরব, চৌকস, সাহসী, সৎ ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী খ্যাত বিচারক হাবিবুর রহমান গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) অবসরে যান।
বর্ণাঢ্য বিচারিক ও প্রশাসনিক কর্মময় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থানে দায়িত্ব পালনকারী সংগ্রামী ও সফল সভাপতি বিচারক হাবিবুর রহমানকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁর কর্মময় জীবনের উপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রদর্শন করা হয়। যাতে সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশিষ্ট সিনিয়র আইনজীবীবৃন্দ, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিগণ সিন্ডিকেটমুক্ত ঢাকা জেলা জজশীপের বর্তমান উন্নত পরিবেশসহ বিদায়ী অতিথির বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন।
ঢাকা জেলার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ ফেরদৌস ওয়াহিদের সভাপতিত্বে বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মোঃ খাদেমুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিন, ঢাকা জেলা জজশীপ মিনিস্ট্রিয়াল কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন গাজী, সিনিয়র সহকারী জজ মোঃ জুলফিকার হোসাইন রনি, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আলমগীর হোসাইন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম জীনাত সুলতানা, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম মিনহাজ—উম—মুনীরা এবং বিচারক হাবিবুর রহমানের স্ত্রী ডা. সানজিদা হাসান প্রমুখ।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জীনাত সুলতানা তাঁর গঠনমূলক বক্তব্যে বলেন যে, স্যার শুধু বিচারকই নন, তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক এবং স্যারের একান্ত প্রচেষ্টায় ঢাকা জজ কোর্টের পরিবেশ উন্নত হয়েছে ও হকারমুক্তসহ ধুমপানমুক্ত ও পরিস্কার—পরিচ্ছন্ন হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ ফেরদৌস ওয়াহিদ তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, আমরা এমন একজন ব্যক্তিত্বকে ঢাকা জেলা জজশীপ থেকে হারিয়ে ফেলার কারণে অভিভাবক শুন্য হয়ে পড়েছি এবং বিচার বিভাগের একজন একনিষ্ঠ, সৎ, বিচক্ষণ ও মেধাসম্পন্ন মানবসম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এ ধরণের সৎ, বিচক্ষণ ও ক্লিন ইমেজ ধারী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চৌকস কর্মকর্তাকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব প্রদান করা হলে দেশ ও জাতির মঙ্গল হবে বলে তিনি মনে করেন।
এছাড়া বিদায়ী বিচারকের বেগম ডা. সানজিদা হাসান তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, বিদায়ী জেলা ও দায়রা জজ এ.এইচ.এম. হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া বেশিরভাগ সময় রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যয় করার কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে কারও কোনো অভিযোগ নেই।
তিনি তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন যে, তিনি বিদায়ী সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ.এইচ.এম. হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া (জিন্না) তাঁর পিতা—মাতার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ও ভক্তি ছিল এবং তিনি তাঁর একজন ভালো জীবন সঙ্গী।
প্রধান অতিথি হিসেবে বিদায়ী সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ.এইচ.এম. হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া তাঁর বক্তব্যের প্রারম্ভেই বলেন যে, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আদর্শ ও নীতিকে স্মরণ করে কাজ করছেন এবং বাকী জীবনেও কাজ করে যাবেন।
তিনি ভারাক্রান্ত মনে প্রকাশ করেন যে, জাতির পিতার আদর্শ এবং নীতি পুরো জাতিকে আকৃষ্ট করার কারণেই এবং বাংলাদেশকে সোনার বাংলা রূপান্তর করার কারণেই কুলাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁকে হত্যা করেছে। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার অশেষ মেহেরবাণীতে তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন বলে আমি মনে করি।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, তিনি ছোটবেলা থেকেই সময়কে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মূল্য বুঝে কাজ করবেন।
তাঁর বক্তব্যে তিনি আরো বলেন যে, মনে রাখতে হবে জনগণের টাকায় আমাদের বেতন হয় এবং এ মূল্যবান সময় অযথা নষ্ট করলে রাষ্ট্র তথা জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে বিধায় তিনি সার্বক্ষণিক সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকার মনোনিবেশ করেন এবং তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে অযথা সময় নষ্ট না করে সার্বক্ষণিক রাষ্ট্রীয় কাজে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
এছাড়া, বিদায় বেলায় তিনি তাঁর বক্তব্যে তাঁর শৈশব ও কৈশর জীবনের স্মৃতি উচ্চারণ করেন এবং দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তিনি প্রাণ বিসর্জন দিবেন বলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৩০০—৪০০ কর্মকর্তা—কর্মচারীসহ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ ও আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলেন যে, কোতয়ালী থানার অধীন ঢাকা জজ কোর্ট এলাকা হওয়ায় তারা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানসহ আশপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন এবং অনুষ্ঠান দেখে পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত আনন্দিত ও বিমোহিত হয়েছেন।
তাঁরা বলেন যে, বিদায়ী সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জিন্না স্যার একজন মেধাসম্পন্ন ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন এবং স্যার ঢাকা জজ কোর্টের নিরাপত্তা জোরদার করেছেন এবং পরিবেশ উন্নত করেছেন এবং স্যারের মন—মানসিকতা খুবই উদার।
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আরো বক্তব্য রাখেন নেজারত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ড. মোঃ আরিফুল ইসলাম এবং তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, স্যার খুবই ভালো মানুষ এবং তার মন—মানসিকতা খুবই উদার।
এছাড়া তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, ঢাকা জজ কোর্ট যাদুঘর নির্মাণ, ঢাকা জজ কোর্ট ফুল ও ফলের বাগান স্থাপনসহ, হকারমুক্ত ও ধুমপানমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা এবং পয়: নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মহোদয়কে ঢাকা জজ কোর্ট প্রশাসন চিরদিন দৃঢ়চিত্তে স্মরণ রাখবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকা জেলা জজশীপের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বিদায়ী অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।