একবার–দুবার নয়, তিন–তিনবার পৃথক তিন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসেন তিনি। প্রতিবারই ভিন্ন নাম-ঠিকানা দেন। শেষ গত ২৯ জানুয়ারি কারাগারে আসেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ।
কিন্তু একই ব্যক্তির প্রতিবারই নাম-ঠিকানায় গরমিল হওয়ায় চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়েছে। আদালত গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) তাঁর প্রকৃত পরিচয় বের করতে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, কারাগারে নতুন বন্দী এলে তাঁর আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হতে হয়। আঙুলের ছাপে উঠে আসে ওই আসামি কারাগারে তিনবার এসেছেন ভিন্ন ভিন্ন নামে। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তাঁর আসল পরিচয় জানা যায়নি।
বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ ৩০ জানুয়ারি আদালতকে লিখিতভাবে জানায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেব কারাগার থেকে পাঠানো চিঠিটি পেয়ে নগরের ইপিজেড থানা-পুলিশকে সঠিক নাম-ঠিকানা তদন্তের নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বলেন, আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর দেখা যায়, আসামি তিনবার তিনটি মামলায় কারাগারে এসেছেন। তিনি প্রথমবার শুভ দাস, দ্বিতীয়বার রিয়াদ ও তৃতীয়বার সাকিব পরিচয়ে কারাগারে আসেন। বিষয়টি লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে একজনের হয়ে আরেকজন কারাবরণ করতে যাওয়া ১৫ জনকে আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, নগরের ইপিজেড থানার আকমল আলী রোড এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তিনজনকে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে ইপিজেড থানা-পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় আরও ১২ থেকে ১৩ জন।
এই ঘটনায় করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইপিজেড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন জানতে পারেন যে ২২ বছর বয়সী এক তরুণ এ ঘটনায় জড়িত। ২৯ জানুয়ারি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিনই তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত।
গ্রেপ্তারের পর ওই তরুণ পুলিশকে নিজের নাম বলেন সাকিব। আর ঠিকানা দেন নগরের বন্দর থানার বারিক বিল্ডিং মোড় এলাকা। পরিচয় হিসেবে বলেন, তিনি ওই এলাকার সোহেল রানার ছেলে।
জানতে চাইলে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ইপিজেড থানার উপপরিদর্শক কামাল হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে জানান, গ্রেপ্তারের পর আসামি নিজেকে সাকিব পরিচয় দিয়ে যে নাম-ঠিকানা বলেছেন, তা সঠিক নয় বলে পরে তদন্ত করে জানা গেছে। এ জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
ইপিজেড থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর আঙুলের ছাপে উঠে আসে যে ২২ বছর বয়সী ওই তরুণ এর আগে দুই দফায় দুই মামলায় কারাগারে এসেছিলেন। কর্তৃপক্ষ চিঠিতে আদালতকে জানান, শেষ ২৯ জানুয়ারি আসার আগে গত বছরের ২৭ জুলাই নগরের পতেঙ্গা থানার বৈদ্যুতিক তার চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে এসেছিলেন ২২ বছর বয়সী ওই তরুণ।
তখন তিনি নিজেকে পতেঙ্গার শাহাদাত কলোনির দিদার আলমের ছেলে মো. রিয়াদ বলে পরিচয় দেন। দুই মাস কারাভোগের পর ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
এর আগে নগরের পতেঙ্গা থানার একটি মাদকের মামলায় ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল কারাগারে এসেছিলেন ওই একই তরুণ। তখন তিনি নিজেকে কিশোরগঞ্জের নিতাই দাসের ছেলে শুভ দাস বলে পরিচয় দেন। ওই বছরের ২০ জুলাই তিনি জামিনে মুক্তি পান। বর্তমানে ওই মামলা দুটি বিচারাধীন।
গ্রেপ্তার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে কিংবা সাজামুক্ত থাকতে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর সম্ভব না হলে তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে অবশ্যই সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাই করা উচিত।
সূত্র: প্রথম আলো