বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে আদালত অবমাননার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ক্ষমা চেয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হননি হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, নুরুল হক নুর লিখিত ব্যাখ্যায় ভবিষ্যতে আদালত অবমাননামূলক বক্তব্য না দেওয়ার বিষয়ে কোনও অঙ্গীকার করেননি।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তার পক্ষে আদালতে লিখিত ব্যাখ্যা পড়ে শুনান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী।
লিখিত ব্যাখ্যায় নুরুল হক নূর আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তার পক্ষে আইনজীবী বলেন, তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারপতিদের নিয়ে বক্তব্য দেননি। সেদিনের বক্তব্যের জন্য আদালতের কাছে নুর নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
এ সময় হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখে বলেন, তার বক্তব্যের কারণে বিচার বিভাগের যে ক্ষতি হয়েছে, বিচার বিভাগের যে মর্যাদা নষ্ট হয়েছে তার কি হবে?
আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, বিচার বিভাগের মর্যাদা অনেক উপরে। কারো বক্তব্যে এত সহজে বিচার বিভাগের মর্যাদা নষ্ট হয় না।
এ সময় হাইকোর্ট সাবেক ভিপি নুরকে ডায়াসের সামনে ডাকেন। তাকে উদ্দেশ্যে করে হাইকোর্ট বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যর অক্সফোর্ড বলা হয়। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ডাকসুর ভিপি ছিলেন।
এখন রাজনীতি করেন কিন্তু আপনি আদালতকে নিয়ে, বিচারপতিদের নিয়ে যে অবমাননামূলক বক্তব্য দিয়েছেন এরকম বক্তব্য পৃথিবীর কোনও রাজনীতিবিদ আজ পর্যন্ত দেননি। আপনি দেখাতে পারবেন না।
আদালত বলেন, আপনার যে ইমেজ, যে ক্যারিয়ার তার সঙ্গে আপনার বক্তব্য যায় না।
এসময় নুরুল হক নুর বলেন, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে সরকারের বিরোধী সবাইকে আদালত কারাগারে পাঠাচ্ছিলেন। সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ক্ষোভের কথাগুলো বলেছি।
তখন হাইকোর্ট বলেন, আপনি রাজনীতি করেন, অথচ এতটুকু জ্ঞান নেই যে আদালত কোনও ব্যক্তিকে জেলে পাঠাতে পারে না।
হাইকোর্ট বলেন, পৃথিবীর বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের জীবনী পড়ে দেখেন, নেতার কাজ কর্মীদের উসকে দেওয়া না। আদালত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। রাষ্ট্রপতি ব্যতীত কেউ আদালতেরও আওতার বাইরে না।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, নুরুল হক নূর বিচারপতিদের নিয়ে উদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি এত সাহস পান কোথায়? তিনি আজ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেখানেও তার বক্তব্যর জন্য অনুতপ্ত হননি, অনুশোচনা করেননি।
এরপর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই ব্যাখ্যায় আমরা সন্তুষ্ট নই।
তখন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা নতুন করে ব্যাখ্যা দাখিল করবো। এ জন্য সময় প্রয়োজন। আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।
আদালত বলেন, নতুন করে আবেদন দিতে চাচ্ছেন সেটা দেন। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে জুডিশিয়ারির মর্যাদা রক্ষায় আমরা যা করার তাই করবো।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হককে তলব করেন হাইকোর্ট। তাকে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন আদালত।
৭ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে নুরুল হক নুরের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে এক সমাবেশে আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে নুরুল হক নুর আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। সেই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কালীপদ মৃধা জানান, হাইকোর্ট নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল দিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে তাকে আদালতে তলব করেছেন।