হেরোইনের ১১ মামলায় জামিন দেওয়া রাজশাহীর জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জিয়া উদ্দিন মাহমুদকে বিচার কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেখানে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব (প্রশাসন-১) মোহাম্মদ ওসমান হায়দার স্বাক্ষর করেছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে এটি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা ও দায়রা জজের মনোনীত কর্মকর্তার কাছে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাকে বর্তমান কর্মস্থলের পদে থাকা দায়িত্বভার অর্পণ করে অবিলম্বে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাদক মামলার বিচার থেকে এক বিচারককে সরিয়ে দিতে নির্দেশ হাইকোর্টের
এর আগে রাজশাহীর জননিনরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদকে মাদকের মামলার বিচার কাজ থেকে সরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
মাদক মামলায় জামিন পাওয়া এক আসামির জামিন বাতিলের শুনানি নিয়ে গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, হেরোইনের ১১ মামলায় আসামিদের জামিন দিয়েছেন এক বিচারক। গত এক বছরে তিনি এসব মামলার আসামিদের জামিন দেন। এর মধ্যে এক মামলায় জামিন বাতিল প্রশ্নে জারি করা হয় রুল।
ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই বিচারককে মাদকের মামলার বিচার কাজ থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। জামিনদানকারী বিচারক হলেন জিয়া উদ্দিন মাহমুদ। তিনি রাজশাহীর জননিনরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে কর্মরত ছিলেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, দেশে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার লাভ করেছে। হেরোইনের মতো নিষিদ্ধ মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই মাদকের বিস্তার রোধে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। সেখানে অধস্তন আদালতের একজন বিচারক হেরোইনের মতো ভয়াবহ মাদকের একের পর এক মামলায় জামিন দেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করছি।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাটের সেই বিচারককে প্রত্যাহার
আদালত বলেন, এভাবে জামিন দেওয়ার ঘটনায় ওই বিচারক তার বিচারকসুলভ মনোভাবের প্রয়োগ করেননি। যদি সেটা করতেন তাহলে এভাবে একের পর এক মামলায় জামিন প্রদানের ঘটনা ঘটত না।
হাইকোর্ট বলেন, আমরা মনে করি ওই বিচারক বিচারকের আসনে বসে তার অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এ কারণে তাকে মাদক সংক্রান্ত মামলার বিচার কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়াটাই উত্তম বলে মনে করছি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। সেখানে একজন বিচারক হেরোইনের ১১ মামলায় জামিন দিয়েছেন।
একশ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হন সেতাবুর রহমান ওরফে বাবু। এ ঘটনায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি মামলা হয় তিনজনের বিরুদ্ধে। এই মামলায় সেতাবুরের জামিন আবেদন একই বছরের ২৬ জুন নামঞ্জুর করেন বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ।
আরও পড়ুন: ঢাকার দুই জজ আদালতে নতুন বিচারক
এই আদেশ দেওয়ার একমাস পর ১ আগস্ট ওই কোর্টে আবারো জামিন চান আসামি। তখন বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। এই জামিন আদেশ বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে হাইকোর্টে আবেদন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
আবেদনে বলা হয়, এক মাস আগে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বিচারক। কি এমন ঘটেছে যে তাকে এক মাস পরেই আবার হেরোইনের মত মাদকের মামলায় জামিন মঞ্জুর করা হলো। যেখানে মামলার সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে অধস্তন আদালতের বিচারকের দেওয়া জামিন আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। ওই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে হাইকোর্টে এফিডেভিট দিয়ে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করা হয়।
সেখানে বলা হয়, বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ গোদাগাড়ীর থানার নয় মামলা এবং চারখালী ও চারঘাটা থানার দুই মামলাসহ হেরোইনের মোট এগারো মামলায় গত এক বছরের আসামিদের জামিন দিয়েছেন।
মঙ্গলবার এসব বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি নিয়ে সেতাবুরের জামিন বাতিলের পাশাপাশি তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আত্মসমর্পণ না করলে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আদেশ দেওয়া হয়েছে।