রাত পোহালেই ঢাকা বারের নির্বাচন। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বার খ্যাত ঢাকা সমিতির ২০২৪-২০২৫ মেয়াদের কার্যকরী কমিটি গঠনে দুই দিনব্যাপী নির্বাচন ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেল ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যের নীল প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
শেষ মুহূর্তে এসে এশিয়ার বৃহত্তম এই আইনজীবী সমিতির নির্বাচন জমে উঠেছে। সাদা প্যানেল নামে আওয়ামী লীগ ও নীল প্যানেল নামে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে ঢাকার আদালতপাড়ায়।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভোটারতালিকা অনুযায়ী সমিতিতে ৩০ হাজার ১২১ জন আইনজীবী সদস্যের মধ্যে ২১ হাজার ৮৩০ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনার নজরুল ইসলাম শামীম জানান, এবার ভোটার প্রায় ২১ হাজার ৮৩০ জন।
সাদা প্যানেল
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সভাপতি পদের প্রার্থী আব্দুর রহমান হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ার শাহাদাত শাওন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাদা প্যানেলের অন্যান্য পদের প্রার্থীরা হলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আবুল কালাম মোহাম্মাদ আক্তার হোসেন, সহ-সভাপতি পদে মো. আবু তৈয়ব, ট্রেজারার পদে মো. ওমর ফারুক, সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মো. মাসরাত আলী তুহিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আসাদুজ্জামান বাবু, লাইব্রেরি সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির সবুজ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মনিরা বেগম মনি, অফিস সম্পাদক পদে সরোয়ার জাহান, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. ওয়াকিলুর রহমান, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে প্রদীপ চন্দ্র সরকার এবং তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে সৈয়দা ফরিদা ইয়াছমিন জেসি।
এছাড়া সদস্য পদে এমদাদুল হক এমদান, হাফিজ আল মামুন, কাজী হুমায়ুন কবির, মাহমুদুল হাসান, আব্দুর রহমান মিয়া, মো. ইমরান হাসান, মো. মোহসিন উদ্দিন, মোহাম্মাদ মইন উদ্দিন বিপ্লব, শাহিন আহমেদ রুপম ও সুমন আহমেদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
নীল প্যানেল
বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী সমিতির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. খোরশেদ মিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট সৈয়দ নজরুল ইসলাম। নীল প্যানেলের অন্যান্য পদের প্রার্থীরা হলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মো. আব্দুর রাজ্জাক (জামায়াত), সহ-সভাপতি পদে মো. সাহিদুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ পদে আব্দুর রশিদ মোল্লা, সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মো. জহিরুল হাসান মুকুল, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ মোহাম্মাদ নজরুল হোসেন (অপু), লাইব্রেরী সম্পাদক পদে মোস. নারগিস পারভীন মুক্তি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নুরজাহান বেগম বিউটি, অফিস সম্পাদক পদে মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মোহাম্মাদ মোবারক হোসেন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে মাহবুব হাসান রানা এবং তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে মো. মাজহারুল ইসলাম মারুফ।
এছাড়া নীল দলের সদস্য পদে আলী মোরতুজা, গাজী তানজিল আহমেদ, মো. আনোয়ার হোসেন চাদ, মো. আসিফ, জাবেদ হোসেন, খালিলুর রহমান, মো. সামসুজ্জামান দিপু, মোহাম্মাদ আলী বাবু, মুক্তা বেগম ও রেজাউল হক রিয়াজ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনের মাঠ
গতবার বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেল নির্বাচন বর্জন করলেও এবার তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ কারণে সাদা ও নীল দলের আইনজীবীদের প্রচারণায় জমে উঠেছে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ কার্যপরিষদের নির্বাচন। সাদা দল নামে আওয়ামী লীগ ও নীল দল নামে বিএনপি দুই প্যানেলে বিভক্ত।
নির্ধারিত দুই দিনে (প্রতিদিন) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে ১ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। পরদিন ভোট গণনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। দুই দলের ২৩ জন করে প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ১০টি সদস্য ও বাকিগুলো সম্পাদকীয় পদ। এবারের নির্বাচনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২০২৩-২০২৪ কার্যকরী কমিটি গঠনের নির্বাচনের দ্বিতীয় দিনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। ফলে একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাদা প্যানেল ২৩টি পদের মধ্যে ২৩টি পদেই জয়লাভ করে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে কোনো এক পক্ষ র্যালি বের করলে এর কিছুক্ষণ পরেই আরেক পক্ষ র্যালি বের করছে। এভাবে গত ১৫ দিন ধরে নিয়মিত প্রচার ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে আদালত পাড়ায়। প্রার্থীরা ভোটারদের চেম্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। মোবাইলে মেসেজ দিয়েও ভোট চাচ্ছেন তারা। ভোট শান্তিপূর্ণ হলে নিরঙ্কুশ জয়ের ব্যাপারে উভয় দলের প্রার্থীরা আশাবাদী।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবদুর রহমান হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক পদে মো. আনোয়ার শাহাদাত শাওন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেলে সভাপতি পদে খোরশেদ মিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই প্যানেলের মূল লড়াই হবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা দল এগিয়ে। তবে নীরবে কাজ করছেন বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান হাওলাদার ১৯৯৭-৯৮ মেয়াদে ঢাকা আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরি সেক্রেটারি ও ২০০৮-০৯ সালে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান হাওলাদার বলেন, আমার ৩৬ বছরের পেশাগত জীবনে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ১৯৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টরে মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমি এবারও সেবার মানসিকতা নিয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদপ্রার্থী।
তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ঢাকা বারকে আরও বেশি স্মার্ট করতে একটি সেবামূলক অ্যাপস শিগগিরই চালু করব। পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য আইনবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও লিগ্যাল রিসার্চ, দুর্নীতিমুক্ত আইন অঙ্গন প্রতিষ্ঠাই হবে আমার মূলমন্ত্র।
তিনি আরও বলেন, বার ও বেঞ্চের সম্পর্ক বৃদ্ধি করে সৌহার্দ গড়ে তুলব। বিগত কমিটি কর্তৃক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বঙ্গবন্ধু ভবন এস-২ নির্মাণকাজসহ ২০২৩-২৪ সালের কমিটি বারের আধুনিকায়নে যে কাজ শুরু করেছে তা অব্যাহত রাখব।