রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, নিউইয়র্ক আদালত সেই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলায় সারবস্তু আছে বলে মনে করছেন নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। এই পরিস্থিতিতে আরসিবিসি পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।
ফিলিপাইনের স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করা এক পত্রে আরসিবিসি বলেছে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তারা আদালতের এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরেছে। ফিলিপাইনের গণমাধ্যম এনকোয়ারার ডট নেট এ খবর জানিয়েছে।
রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের মধ্য থেকে ব্লুমবেরি ও ইস্টার্ন হাওয়াই নামে দুটি ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দিয়েছেন নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু মামলা খারিজ হয়নি।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারির সিদ্ধান্তে নিউইয়র্ক রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, তিনটি ‘কজ অব অ্যাকশনের’ আইনি ভিত্তি নেই। আরসিবিসি ব্যাংক ও সব বিবাদীর বিরুদ্ধে অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাৎ—এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা বা প্ররোচনা, জালিয়াতি (আরসিবিসির বিরুদ্ধে), জালিয়াতিতে সহায়তা বা প্ররোচনা—এসব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন।
এ ছাড়া ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় আরও চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। তাঁরা হলেন ইসমায়েল রেয়েস, ব্রিজিত ক্যাপিনা, রোমুয়ালদো আগারাদো ও নেস্তর পিনেদা।
তবে নিউইয়র্কের আদালত জানিয়েছেন, আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগে মামলা চলতে পারে, যেমন যে অর্থ আরসিবিসিতে গেছে, তা ফেরত দেওয়া। এ বিষয়ে আরসিবিসি জানিয়েছে, আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আসামি করে মামলাটি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাৎ, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা বা প্ররোচনা, জালিয়াতি (আরসিবিসির বিরুদ্ধে), জালিয়াতিতে সহায়তা বা প্ররোচনাসহ বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুইফট ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে ৩৫টি ভুয়া বার্তার মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখায় বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টা চালায় অপরাধীরা। এর মধ্যে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাট করতে সক্ষম হয় তারা। অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যায় দুই কোটি ডলার, যে অর্থ অবশ্য উদ্ধার হয়েছে। তবে বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে ফিলিপাইনের বিভিন্ন ক্যাসিনোয় ঢুকে যায়। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার করা হয়েছে; বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনো পাওয়া যায়নি।
২০১৯ সালে ফিলিপাইনের আরসিবিসি, দেশটির ক্যাসিনোসহ ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আর ৩ চীনা নাগরিককে আসামি করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ। অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসামিরা অর্থ চুরি করেছে। তবে মামলার বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট আদালতের এখতিয়ারের বাইরে—এই কথা বলে আরসিবিসিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পাল্টা মামলা করেন। মামলাটি খারিজের আবেদনও করেন তাঁরা।
২০২০ সালের ২০ মার্চ দেওয়া রায়ে বলা হয়, মামলাটি টেকনিক্যাল হওয়ায় তা বিচারের জন্য গ্রহণ করা হয়নি, যদিও এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়েরের সুযোগ আছে বলেও রায়ে মতামত দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ মে নিউইয়র্কের কাউন্টি সুপ্রিম কোর্টে আরেকটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।