সমসাময়িক আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার গতিবিধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪’। এর ফলে দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার আশা করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটির ওপর দেয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন।
বিলে বলা হয়েছে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কসমূহের শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমানত গ্রহণ করা যাবে। পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট তাদের স্বল্প মেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র ও গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান, বিল ডিসকাউন্টিং, বিল নেগোশিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বহিঃলেনদেন সেবা প্রদান করতে পারবে।
বিলে বলা হয়েছে, অনিবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানত ও ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিংয়ে বিদেশের বিভিন্ন উৎস এবং অনুমোদিত বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল নেওয়া যাবে।
বিল অনুযায়ী, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট যেকোনো অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব পরিচালনা করতে পারবে। এ ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আমানতকারী বা বেদৈশিক ঋণদাতাদের প্রদেয় সুদ বা মুনাফা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত থাকবে। আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাব যেকোনো শুল্ক ও লেভি মুক্ত হবে।
এ আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী অনিবাসী বা ক্ষেত্রমত বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তির সঙ্গে পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
এছাড়াও অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকতে হবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয়, তফসিলি ব্যাংকের অফশোর কার্যক্রমের জন্য পৃথক হিসাবপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিট থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে।
বিলের উপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপনসহ বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী, সেলিম মাহমুদ, বিরোধী দলের সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এবং মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
এর আগে গত বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
রিজার্ভ বৃদ্ধি, আর্থিক কাঠামোকে সমৃদ্ধ ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশে প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিংয়ের আইন করা হচ্ছে বলে জানান সরকারের নীতি নির্ধারকরা। একইসঙ্গে অফশোর ব্যাংকিং চালু হলে দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।