বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের সর্বোচ্চ বিচারঙ্গনের আইনজীবীদের মর্যাদাও ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে সরকার।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা বলেন।
অবিলম্বে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, রাজসিংহাসন দখলে রেখে অনন্তকাল অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার অসৎ অভিপ্রায়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান, আইন আদালত, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন সবকিছু মুঠোই পুরে দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছে। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে পাঠিয়েছে কবরে। যেখানেই ভোট, সেখানেই আওয়ামী ভোট ডাকাত—সেখানেই সন্ত্রাস! দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠনও তাদের কালো থাবায় বিপর্যস্ত। এভাবে চলতে থাকলে দেশকে ভয়ানক গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। সরকারের হাতের মুঠোয় রয়েছে ধ্বংসের শক্তি।
তিনি বলেন, লন্ডভন্ড নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পেশীশক্তির উন্মত্ততার হিংস্র প্রতিফলন দেশের জনগণ অবলোকন করল সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনেও। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ যেসব কূটকৌশল অবলম্বন করছে তার সবকিছুই তারা সদ্য সমাপ্ত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে প্রয়োগ করেছে। গত ৬ এবং ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতি, কারচুপি, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে যুবলীগের মারামারি, হাঙ্গামা, সংঘর্ষ, অস্ত্রের মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যূথীকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা, পরে আবার শেখ হাসিনা ও মেয়র তাপসের প্রার্থীকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আইনঙ্গনের আইনজীবীদের মর্যাদা ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছে। ওরা হিংসা-প্রতিহিংসার পথে দেশের রাজনীতিকে উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
রিজভী বলেন, এ ভোট জালিয়াতি ও নিজেদের অপকর্মের ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত মিথ্যা সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ফল গণনা নাটকের নামে জালিয়াতি করে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে হারিয়ে শেখ হাসিনা ও যুবলীগের চেয়ারম্যান পরশের আপন ভাই মেয়র তাপসের প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের নির্বাচনে ভোটে যার সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার কথা তাকে পুরা হয়েছে জেলে! আর যার নিশ্চিত পরাজিত হওয়ার কথা তাকে শেখ হাসিনার নির্দেশে বসানো হয়েছে সম্পাদকের চেয়ারে। ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে যে মামলায় আটক করা হয়েছে সেই মামলায় এক নম্বর আসামি যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যূথীকে গ্রেপ্তার তো দূরের কথা তার নাম নিতেও ভয় পাচ্ছে পুলিশ।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান বলেছেন, যূথীকে খুঁজে পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ মামলার পর সেই রাতেই বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর যূথীকে খুঁজে পাবে কীভাবে?। অ্যাডভোকেট যূথী হয়তো গণভবনেই অবস্থান করছে। পুলিশ শুধু বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার আগেই খুঁজে গ্রেপ্তার করে। না পেলে বিএনপি নেতাদের মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান পরিবারের সদস্যদের তুলে নিয়ে যায়। ২০ জনের নামে করা এজাহারে যূথী শুধু এক নম্বর আসামিই নয়, দৃশ্যমান আক্রমণকারীদের একজন পৃষ্ঠপোষক। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার সবকিছু ধারণ করা আছে।
তিনি আরও বলেন, অথচ মামলার পরদিন শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলকে। পরশ-তাপস দুই ভাইয়ের মারামারি এবং পারিবারিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সামাল দিতে এবং সম্পাদক পদ দখলের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়েছে কাজলকে। এত সহিংসতা ঘটলেও বিচারপতিরা নিশ্চুপ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীসহ সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী কয়েকজন প্রার্থী।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ফল আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে এমন নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা হস্তক্ষেপ করেছে। সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল কেন মামলার আসামি হবে? আমরা এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করছি এবং অবিলম্বে নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমাদের প্যানেলের যিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনিও নতুন নির্বাচন চেয়েছেন।