রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে সগিরা মোর্শেদ হত্যার ঘটনায় দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অনাদায়ে তাদের আরো ৬ মাসের কারাভোগ করতে হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
আজ বুধবার (১৩ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
আসামিরা হলেন- আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও মারুফ রেজা। দণ্ডপ্রাপ্ত আনাস মাহমুদ নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাশুর ডা. হাসান আলী চৌধুরীর শ্যালক।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তিন আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- নিহতের ভাশুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন ও মন্টু মন্ডল।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি একই আদালত রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে এ মামলায় রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত দুই দফায় রায় ঘোষণা পিছিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, সগিরা মোর্শেদ সালাম ১৯৮৯ সালে ভিকারুননিসা নুন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যান। বিকাল ৫ টায় সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতে থাকা স্বর্ণের চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় নিজেকে বাঁচাতে দৌঁড় দিলে গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান তিনি।
পরে ওই ঘটনায় সগিরার স্বামী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটির ওপর স্থগিতাদেশ থাকায় ২৮ বছর ওই মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত ছিল। ২০১৯ সালের ২৬ জুন মামলার কার্যক্রমের উপর দেয়া আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মামলার অধিকতর তদন্ত বাতিল প্রশ্নে জারিকৃত রুল খারিজ করে দেন আদালত।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই হত্যা মামলাটি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ৯০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশে আদালত বলেন, নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখতে পাচ্ছি সাক্ষীরা তৎকালকালীন একজন মন্ত্রীর ভাগ্নের জড়িত থাকার কথা বলেছে। গ্রেপ্তার করার পর চাপের কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। মন্ত্রী সাহেবের ভাগ্নে এতো ক্ষমতাবান। সাক্ষীতে নাম এসেছে বলেই তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন তা তো নয়। অধিকতর তদন্তে বাধা কোথায়।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আদালতে অভিযোগেত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামিরা শিক্ষিত এবং হোয়াইট কালারের অপরাধী হওয়ায় তারা জামিন পেলে বাংলাদেশ ত্যাগ করে চির পলাতক হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা রয়েছে। সেজন্য আসামিদের বিচার সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার অভিযোগপত্রে জোর আবেদন জানান তিনি।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সঙ্গে আসামি শাহীনের বিভেদ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া শাশুড়ি সগিরাকে অনেক পছন্দ করতেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সগিরা-শাহীনেরও মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্বোধন করা নিয়েও পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল।
‘সগিরার কাজের মেয়েকে মারধর করে আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরী। এ নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে শাহীন সগিরাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আসামিরা নিজেদের বাসায় বসে সগিরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ডা. হাসান আলী তার চেম্বারে অপর আসামি মারুফ রেজার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় হত্যার চুক্তি করে। ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই মারুফ রেজা ও আনাস মাহমুদ সগিরাকে গুলি করে হত্যা করে।’