কক্সবাজারের মাদকের এক মামলায় হাইকোর্ট কোনো আদেশ না দিলেও আসামির জামিন হয়েছে মর্মে নোট দেওয়ায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। ঈদুল ফিতরের পর তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) এ আদেশ দেন।
কক্সবাজারের মাদকের মামলায় হাইকোর্টে জামিন চান মো. এমরান নামে এক আসামি। গত ১১ মার্চ আবেদনটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ছিল। কিন্তু সেদিন শুনানি ও আদেশ কিছুই হয়নি।
অথচ আসামির জামিন হয়েছে মর্মে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোট দেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। ওই নোটের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গায়েবি’ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন।
বিষয়টি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নজরে আসে। বৃহস্পতিবার দুপুরের বিরতির পর এজলাসে আসেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেন। এজলাসে আসন গ্রহণের পর তারা ডায়াসে ডেকে নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদকে।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এসময় বলেন, “ইমরান বনাম রাষ্ট্র” মামলায় আমরা আসামিকে জামিন দিইনি। অথচ আপিল বিভাগ থেকে জামিন আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে কীভাবে আপনি এত বড় ভুল তথ্য দিলেন। এই কর্মকাণ্ডের জন্য আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। আপনি যেভাবে নোট দিয়েছেন সেভাবে পরবর্তী প্রক্রিয়া এগিয়েছে। এখানে অ্যাটর্নি জেনারেলের কোনো দায় দেখছি না।
এ পর্যায়ে সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, কার্যতালিকার পূর্বের মামলার জামিন আদেশের বিষয়টি ভুল করে এই মামলায় মার্ক করেছি। এটি আমার ভুল হয়েছে।
এ পর্যায়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, যে আদেশ দিইনি সেটা কীভাবে স্থগিতের জন্য আপিল বিভাগে যেতে পারে। ৩৪ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে আছি। সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কেউ কোনোদিন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। অথচ একজন আইন কর্মকর্তা হয়ে একটা অসত্য তথ্য দিয়ে কোর্টকে হেয় করলেন। কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলেন। এটার জবাবদিহি আপনাকে করতে হবে।
এ পর্যায়ে ওই আইন কর্মকর্তা ডায়াসের সামনে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
তখন বিচারপতি নজরুল ইসলাম বলেন, সম্মানের জন্য বিচারকের আসনে আছি। সম্মান যদি না থাকে তাহলে কীসের বিচার কাজ। আপনার একটা অসত্য তথ্যে গণমাধ্যমে আমাদের নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার হলো। আমি তো রাতে ঘুমাতে পারিনি। অথচ আমরা ওই মামলার শুনানিই করিনি। আদেশ তো দূরের কথা।
বিচারপতি আরও বলেন, আমরাও তো মানুষ, আমাদেরও হৃদয় আছে। আপনার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। অথচ আমাদের নিয়ে একটা অসত্য তথ্য প্রচার হলো। এর দায় কে নেবে? আপনি (ডিএজি) তো আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন।
ডিএজি সাইফুদ্দিন খালেদের উদ্দেশে বিচারপতি নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ডিএজি থেকে বিচারপতি হয়। আপনারও বিচারপতি হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু আপনি একটা কোর্ট সম্পর্কে কেন এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন? আপনার কর্মকাণ্ডে বিচার বিভাগ হুমকির মুখে পড়েছে। এটা তো কোনো ছেলেখেলা নয়। আপনি বন্ধের পর এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবেন। যদি সন্তুষ্ট না হই তখন লিখিত আদেশ দেব।