দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সম্পাদক শাহ মনজুরুল হক বলেছেন, বিচারক-আইনজীবীদের হতে হবে সৎ-মানবিক ও দয়ালু। কেউ যেনো তাদের কাছে হয়রানি না হন।
রাজধানীর একটি বিলাসবহুল কনভেনশন সেন্টারে শুক্রবার (২৯ মার্চ) নবীন সহকারী জজ ও আইনজীবীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
হক ল’ একাডেমির পরিচালক অ্যাডভোকেট নূরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. শাজাহান মণ্ডল, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আরিফুল ইসলাম, মিল্টন হোসেন, মোতাছিম বিল্যাহ, সাবেক যুগ্ম জেলা জজ সাজ্জাদ হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মেফতাহুল হাসান, কান্ট্রি এডিটরস ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, হক ল’ একাডেমির চেয়ারম্যান বুশরাত মাসুমা নিপা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নবীন আইনজীবীদের উদ্দেশে শাহ মনজুরুল হক বলেন, কখনো মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না। মামলা পরিচানার ক্ষেত্রে যা সত্য আদালতের কাছে সেটাই তুলে ধরতে হবে। ল’ইয়ার মানে লায়ার এমন একটা কথা প্রচলিত আছে। তবে কেউ যদি ইচ্ছা করে মিথ্যা বলার প্রয়োজন নেই। কারণ একজন আইনজীবীকে আইন মোতাবেক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে হয়। সুতরাং আইনে যা আছে সেটা উপস্থাপন করলেই হয়, মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার দরকার হয় না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নবনির্বাচিত সম্পাদক বলেন, বলা হয়ে থাকে আইনজীবীরা কখনো হারে না। এমনকি বিচারপ্রার্থীও হারে না। যার পক্ষে আইন নাই, অন্যায়ভাবে প্রতিকার পেতে চায় সে আইনের কাছে হেরে যায়। সুতরাং এখানে আইনজীবী কিংবা মক্কেলের হারানোর কিছু নাই।
তিনি বলেন, আইন পেশার শুরুর দিকে আমাকে অনেকেই বলতেন টাকার পিছনে না দৌড়াতে, বলতেন টাকা নাকি আমার পিছনে দৌড়াবে! আমি তখন বিশ্বাস করতে পারতাম না। মনে হতো সবাই টাকার পিছনেই তো দৌড়ায়, টাকা আবার কারো পিছনে দৌড়ায় নাকি! আজকে আমিও আপনাদেরকে একই কথাই বলছি, টাকার পেছনে দৌড়াবেন না, টাকা এক সময় আপনার পেছনে দৌড়াবে। এই কথা এখন হয়তো বিশ্বাস হবে না, যদি পড়াশোনা ও পরিশ্রমের সাথে সঠিকভাবে এই পেশায় আত্মনিয়োগ করেন, তবে ৫-১০ বছর পর দেখবেন এটাই সত্যি।
বিচারপ্রার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যদি বিচারপ্রার্থীকে টাকার মেশিন মনে করেন তাহলে টাকা হয়তো আয় করবেন কিন্তু সেই ইনকাম করা টাকা আপনাকে সুখ দেবে না। আপনি বিচারক হন কিংবা আইনজীবী, ঐ টাকার প্রতি লোভ করবেন না। মানুষের প্রতি সিম্প্যাথি, এম্প্যাথি ও ভালোবাসা সহ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন।
শাহ মনজুরুল হক বলেন, আইনজীবী ও বিচারকরা যদি সততা ও মানবিকতার সাথে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় নিযুক্ত থাকেন তবে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। কারণ মানুষের জন্য আপনি কিছু করতে পেরেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট নূরুল হক বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দক্ষ বিচারক ও আইনজীবী তৈরির জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আইন অঙ্গনের নতুন এ সদস্যদের উৎসাহিত করতেই আমাদের এ আয়োজন।
একাডেমির শিক্ষার্থী রুমি নোমান ও খাদিজা মুন্নির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে একাডেমির সাবেক-বর্তমান প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এসময় ২০ জন সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী জজ ও ২০০ আইনজীবীকে গাউন ও ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে একাডেমির প্রথম স্মরণিকা ‘আইনের বাতিঘর’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।