রাজধানীর উত্তরায় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মাদক মামলায় তার পরিবর্তে অর্থের বিনিময়ে মিরাজুল ইসলামের সাত বছরের জেল খাটার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী ও কারাগারের কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন হাইকোর্ট।
পত্রিকায় প্রকাশিত বিবিন্ন প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
জালিয়াতির বিষয় নজরে এনে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এদিকে আসামিকে পক্ষের আইনজীবীরা তার নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার করার আবেদন করেছেন।
জানা যায়, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে উত্তরার একটি বাসায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ আনোয়ার হোসেন নামে একজনকে আটক করে। তবে পালিয়ে যান চক্রের মূলহোতা যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় পলাতক নাজমুল হাসানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত।
নাজমুল ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা। কিন্তু এ পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে যিনি জেল খেটেছেন তার প্রকৃত নাম মিরাজুল ইসলাম। এর মধ্যে সাত বছরের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ওই আপিল শুনানির শেষ পর্যায়ে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ চেয়ে আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তখন আদালতে আবেদন জানালে ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় নিম্ন আদালতের এক আইনজীবী বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনেন। তখন প্রধান বিচারপতি আপিল নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চে পাঠান।
শুনানিতে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট প্রকৃত ব্যক্তির পরিবর্তে অন্য একজন জেলে গিয়ে জামিনের পর আপিল দায়ের করেন, যার মাধ্যমে প্রকৃত আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।
এ বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, শুনানি সময় আপিলকারী পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও রমজান খান মামলা হতে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করার আবেদন জানান। আদালত শুনানি শেষে কয়েকটি আদেশ দিয়েছেন।
এক. ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর আসামি আত্মসমর্পণ করাকালীন তার প্রকৃত পরিচয় কীভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল সে বিষয়ে অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ঢাকার বিচারক মো. মোরশেদ আলমকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলেছেন।
দুই. নিম্ন আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলামকে আগামী সাতকার্য দিবসের মধ্যে ঘটনার বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলফনামা আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিন. কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আসামিকে কী প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করেছেন তার প্রমাণপত্রসহ হলফনামা সহকারে লিখিত জবাব আগামী সাতকার্য দিবসের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
চার. ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী কেরানীগঞ্জ ঢাকাকে আসামির স্বাক্ষর কীভাবে সত্যায়িত করেছেন তা হলফনামা আকারে সাতকার্য দিবসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
পাঁচ. সাজাপ্রাপ্ত আসামি নাজমুল হাসানকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয় তার লিখিত বক্তব্য তার আইনজীবী রমজান খানের মাধ্যমে সাতকার্য দিবসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত মামলাটি পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ মে নির্ধারণ করেছেন।
এ বিষয়ে মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, আমরা শুনানিতে বলেছি আদালত শাস্তি দেন আসামিকে। আসামি যদি শাস্তি পান তাহলে তার মধ্যে একটা প্রতিক্রিয়া হবে। এখানে কিন্তু আসামি অনেক প্রভাবশালী। সে কারণে টাকা দিয়ে একজন গরিব মানুষকে জেলে পাঠিয়েছেন। এতে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আজ এসব বিষয়ে শুনানি নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে, সেই আশা করছি। আসামি চিহ্নিত করতে ফিঙ্গারপিন্টসহ সরকারের কাছে অনেককিছু আছে। এগুলো ঠিকমতো দেখলেই তো বোঝা যাবে কে মূল আসামি।