আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দরিদ্র-অসহায় নাগরিকদের আইনগত সহায়তা পাওয়ার সঙ্গে দেশের আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও সামাজিক সমতা জড়িত। অস্বচ্ছল নাগরিকরা আইনগত সহায়তা পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। আইনগত সহায়তা পাওয়া তার প্রতি করুণা নয় বরং এটা তার অধিকার।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মূল সংবিধানেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক সুবিচার ও সমতার বিধানাবলিসহ বিচার প্রক্রিয়ায় ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব নাগরিকের প্রবেশাধিকারের বিধান সন্নিবেশ করে গেছেন।
আজ রোববার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই সাড়ে সাত বছর শেখ হাসিনা সরকারে না থাকায় তাদের এই অধিকার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। তিনি আইনি সহায়তা কার্যক্রম রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে যুগান্তকারী বহু পদক্ষেপ নেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো রাজধানী ঢাকায় প্রধান কার্যালয় স্থাপন করারসহ দেশের ৬৪টি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে লিগ্যাল এইড ও চৌকি এবং বিশেষ করে শ্রম আদালতেও লিগ্যাল এইড কার্যক্রম শুরু।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২১ বছর আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষগুলোর আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকারের প্রতি কেউ দৃষ্টি দেয়নি। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠন করেই ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ প্রণয়ন করেন। ফলে বাংলাদেশে প্রথম রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অসচ্ছল ও সহায়-সম্বলহীন নাগরিকদের আইনগত অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
আনিসুল হক বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের মূল উদ্দেশ্য দরিদ্র-অসহায় মানুষকে আইনগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রদান। আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে আরও সফল ও বেগবান করে তুলতে হলে এটিকে অবশ্যই জনগণের দোরগোড়ায় অর্থাৎ যারা আইনি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য তাদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আর তা করতে হলে উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটিকে অধিকতর কার্যকর করতে হবে। কারাগারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, আইনি সহায়তা প্রদানকালে পুঁথিগত আইন প্রয়োগের দৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণকেও স্থান দেওয়া উচিত। পাশাপাশি আইনগত সহায়তার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্বপ্রণোদিত, দ্রুত ও কার্যকর আইনি সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্ব বৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রত্যেক লিগ্যাল এইড কমিটি, লিগ্যাল এইড অফিসার ও প্যানেল আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
ঢাকার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তামান্না ফারাহ্’র সঞ্চালনায় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন।
অনুষ্ঠানে দুজনকে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও প্যানেল আইনজীবী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।