স্কুল জীবন থেকেই শিক্ষার্থীদের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জরিপের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব ছিল বিভিন্ন সচেতন মহল ও অভিভাবকের পক্ষ থেকে। যুক্তিটি ছিল, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সকল নাগরিকের ভূমির সাথে সম্পর্ক রয়েছে। আবার, প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর ক্রয় কিংবা উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হবার সময় দেখা যায় বেশিরভাগের মানুষেরই ভূমি ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয়েও ন্যূনতম ধারণা থাকেনা।
এই প্রেক্ষাপটে ভূমি মন্ত্রণালয় জনসাধারণের প্রস্তাবটি গুরুত্বের সাথে নিয়ে ২০১৮ সালে মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সাথে একটি কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক প্রস্তাব পাঠায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি পরবর্তীতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এ পাঠানো হয় ২০১৯ সালে।
তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী বিভিন্ন মঞ্চে বেশ কয়েকবার স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ভূমি সংক্রান্ত সাধারণ জ্ঞান অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছিলেন। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায়, বর্তমান ভূমি সচিব মোঃ খলিলুর রহমান যোগদান করার পর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার গুরুত্বের সাথে তাগাদা দেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় এই ব্যাপারটি পর্যালোচনাধীন রয়েছে। সবশেষে, ২০২৪ সাল থেকে কার্যকর হওয়া নবম শ্রেণির ‘জীবন ও জীবিকা’ পাঠ্যবইয়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার মৌলিক জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করে এনসিটিবি।
সম্প্রতি নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ভূমি শিক্ষার কথা উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ভূমি ভবনে এক আলোচনার সময় বলেন, আমরা বিশ্বাস করি স্কুল শিক্ষার্থীদের এ ধরনের মৌলিক ভূমি জ্ঞান প্রদান একটি অধিকতর অবহিত ও সচেতন স্মার্ট সমাজ গঠনে অবদান রাখবে।
আরও পড়ুন: হেবা, দান ও অছিয়ত দলিল নিবন্ধনে লাগবে না টিআইএন
তিনি আরও বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়েই তরুণদের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সর্বোপরি ক্যাডাস্ট্রে-এর ধারণার সাথে সাধারণ পরিচিত ঘটলে, তাঁদের তা দায়িত্বশীল স্মার্ট নাগরিক হিসাবে সচেতন ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নাগরিক অধিকার প্রয়োগ এবং জীবনে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনাকে বেগবান করবে বিষয়টি – তিনি এসময় যোগ করেন।
জীবন ও জীবিকা পাঠ্যপুস্তকের ‘আর্থিক ভাবনা’ শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে মূলত জমি কিংবা ফ্ল্যাটে বিনিয়োগে যেসব বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হয় সে প্রত্যয় দিয়ে এর আওতায় ভূমি বিষয়ক মৌলিক জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লিখিত পাঠ্যবইয়ে শুরুতেই বলা হয়েছে:
“জমি বা ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ স্বাভাবিক বিবেচনায় লাভজনক। নির্দিষ্ট সময় শেষে জমি বা ফ্ল্যাটের মূল্য বৃদ্ধি পায় এটা যেমন সত্যি, তেমনি এ ধরনের বিনিয়োগের আগে জমি বা ফ্ল্যাটের বিভিন্ন ধরনের দলিল ও কাগজপত্র সম্পর্কে, মালিকানা পরিবর্তনের বিধি-বিধান সম্পর্কে এবং জমি বা ফ্ল্যাটের ওপর আরোপিত সরকারি খাজনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এ সব বিষয় না জানলে অনেক ক্ষেত্রে জাল দলিল, ভুয়া কাগজপত্রের জন্য আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি আইনগত জটিলতাতেও পড়তে হয়। জমি বা ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের আগে একজন বিনিয়োগকারীর কিছু বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। আমরা এখন সেগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নেব।”
আরও পড়ুন: ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের বিধিমালা জারি শিগগিরই
এরপর ‘জমি বা ফ্ল্যাট সংক্রান্ত কাগজপত্র বিভিন্ন দপ্তরের সাথে পরিচয়’, ‘জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে করণীয়’, ‘জমি ক্রয়ের পর যা করণীয়’ এবং ‘নামজারি কিংবা খাজনা প্রদানের কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় প্রদত্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার’ শিরোনামাধীনে ভূমি নিবন্ধন, ব্যবস্থাপনা ও জরিপের মৌলিক বিষয় এবং প্রাসঙ্গিক দপ্তরসমূহের সাথে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের প্রাঞ্জল ভাষায় পরিচয় করানো হয়েছে।
‘জমি বা ফ্ল্যাট সংক্রান্ত কাগজপত্র বিভিন্ন দপ্তরের সাথে পরিচয়’ শীর্ষক অংশে ভূমি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক দিকগুলি তুলে ধরা হয়। এ অংশ শুরু হয় নিবন্ধন দলিল, খতিয়ান, নামজারি, খাজনা তথা ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) এবং জমির ম্যাপসহ জমি-সম্পর্কিত বিভিন্ন নথির তথা কাগজপত্র/দলিলাদি সংক্ষিপ্ত ও সহজ বর্ণনা দিয়ে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সচিত্র পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অংশের লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের কাছে ভূমি প্রশাসনের বিভিন্ন বহুল ব্যবহৃত শব্দ এবং পরিভাষার উপর একটি মৌলিক ভিত্তি স্থাপন করা।
‘জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে করণীয়’ এবং ‘জমি ক্রয়ের পর যা করণীয়’ অংশে মূলত নতুনভাবে জমির মালিকানা লাভের পর করণীয় ও বর্জনীয়-এর ব্যাপারে সাধারণ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
‘নামজারি কিংবা খাজনা প্রদানের কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় প্রদত্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার’ অংশে নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর ও সর্বোপরি ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশন ও স্মার্ট ভূমিসেবা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।