মাদক মামলায় অর্থের বিনিময়ে অন্য আসামির জেল খাটার ঘটনায় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে রোববার (১২ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আনার বিষয়ে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা।
আরও পড়ুন: আসামির আয়নাবাজি : বিচারক-আইনজীবী-কারাকর্মকর্তার ব্যাখ্যা তলব
এর আগে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী ও কারা কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ২৪ এপ্রিল হাইকোর্টের একক বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
ওইদিন জালিয়াতির বিষয়ে নজরে এনে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আসামিকে পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান ও মোহাম্মদ রজমান খান। তবে তারা নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
জানা যায়, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে উত্তরার একটি বাসায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ আনোয়ার হোসেন নামে একজনকে আটক করে। তবে পালিয়ে যান চক্রের মূলহোতা যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় পলাতক নাজমুল হাসানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত।
নাজমুল ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা। কিন্তু এ পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে যিনি জেল খেটেছেন তার প্রকৃত নাম মিরাজুল ইসলাম। এর মধ্যে সাত বছরের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে প্রকৃত আসামির পরিবর্তে অন্য একজন জেল খাটার বিষয়ে মামলার শুনানিতে আদালত ছয়জনের নিকট ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
অর্থের বিনিময়ে মিরাজুল ইসলামের জেল খাটার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতে আবেদন জানান। পরে বিষয়টি শুনানি হয়।
শুনানিতে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে স্পষ্ট, প্রকৃত ব্যক্তির পরিবর্তে অন্য একজন জেলে গিয়ে জামিনের পর আপিল দায়ের করেন। যার মাধ্যমে প্রকৃত আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, যার কারণে আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’
এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে আবেদন জানান তিনি। শুনানির সময় আপিলকারী পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও রমজান খান মামলা হতে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করার আবেদন জানান।
আদালত শুনানি শেষে নিম্নোক্ত আদেশ দেন
১. গত বছরের ৯ আগস্ট আসামি আত্মসমর্পণ করাকালীন তার প্রকৃত পরিচয় কীভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল সে বিষয়ে অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ঢাকার বিচারক মো. মোরশেদ আলমকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে হবে।
২. নিম্ন আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলামকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলফনাম আকারে আদালতে দাখিল করতে হবে।
৩. কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আসামিকে কী প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করেছেন তার প্রমাণপত্রসহ হলফনামা সহকারে লিখিত জবাব আগামী সাতকার্য দিবসের মধ্যে জমা দিতে হবে।
৪. কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলীকে আসামির স্বাক্ষর কীভাবে সত্যায়িত করেছেন তা হলফনামা আকারে সাতকার্য দিবসের মধ্যে আদালতে জমা প্রদান করতে হবে।
৫. সাজাপ্রাপ্ত আসামি নাজমুল হাসানকে মিডিয়ায় প্রকাশিত অভিযোগের বিষয় তার লিখিত বক্তব্য তার আইনজীবী রমজান খানের মাধ্যমে সাত কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে।