ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব আসছে
ঋণখেলাপি

মামলা নয়, সমঝোতায় খেলাপি ঋণ আদায়ের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

খেলাপি ঋণ আদায়ে দীর্ঘসূত্রতা পরিহারে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া অনুসরণে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা পরিপত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় বৃদ্ধির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর অনুসরণের মাধ্যমে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সব ব্যাংকের খেলাপি ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১ শতাংশ নগদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করতে ব্যাংকের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার এবং প্রতি ষাণ্মাসিকে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ-বিষয়ক অগ্রগতির পরিস্থিতি উপস্থাপন করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে।

পরিপত্রে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের এক পত্রের সূত্রে বলা হয়েছে, অনাদায়ি পাওনা আদায়সহ অন্যান্য যেকোনো বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আর্বিট্রেশন সেন্টারের সহায়তা নেওয়া এবং বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ব্যাংকের সম্পাদিত ঋণচুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়।

তা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সফলতার হার আশানুরূপ নয়, যেমন খেলাপি গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে সদিচ্ছার অভাব, মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ছাড় না দেওয়ার প্রবণতা, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতায় যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়া, মধ্যস্থতাকারীর পারিশ্রমিক নির্ধারণ ও পরিশোধে অনীহা, কালক্ষেপণ, পক্ষগুলোর মতভেদ দূর করতে মধ্যস্থতাকারী কর্তৃক যথাযথ ভূমিকা না রাখা ইত্যাদি।

মূলত খেলাপি ঋণ আদায় ত্বরান্বিত করতে এই পরিপত্র জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায় ত্বরান্বিত করতে গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যবহারের সুযোগ আছে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, মধ্যস্থতা ফলপ্রসূ না হলে এবং উভয় পক্ষ আগ্রহী হলে আর্বিট্রেশন বা সালিসি প্রক্রিয়ায় যেতে পারে। স্বল্প সময়ে ও পূর্বনির্ধারিত পদ্ধতিতে সালিসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সালিস কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করতে পারে।

মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিরোধী পক্ষ ও মধ্যস্থতাকারীর পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পারিশ্রমিকের পরিমাণ, পরিশোধকারী পক্ষ ইত্যাদি নির্ধারণ ও যথাসময়ে তা পরিশোধ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া সফল করা ও খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে ও বিদ্যমান বিআরপিডি সার্কুলার বা নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক ছাড় দেওয়ার বিবেচনা করতে পারে।

এ ছাড়া মামলা করার আগে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে। বলা হয়েছে, মামলা করার আগে মধ্যস্থতার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়সংক্রান্ত তথ্য পরিচালক, ব্যাংকিং প্রবিধি নীতি বিভাগ (ডিভিশন-২), বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩–এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ আইনের অধীন যেসব মামলা হয়, সেসব মামলায় বিবাদীর লিখিত জবাব দাখিলের পর ২২ নম্বর ধারা অনুসারে আদালত প্রতিটি মামলা পক্ষগণের কাছে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পাঠিয়ে থাকেন।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, মধ্যস্থতার মাধ্যমে কোনো মামলার নিষ্পত্তির আদেশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল বা রিভিশন দায়ের করা যাবে না। আইন অনুযায়ী আদালতের রায় বা আদেশ দেওয়ার আগে মামলার যেকোনো পর্যায়ে উভয় পক্ষ আদালতের অনুমতিক্রমে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে।