মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত একইসঙ্গে জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন।
সোমবার (১৩ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।
আদালত জানান, বিশেষ ব্যাধিগ্রস্ত আসামি ছাড়া কনডেম সেলে থাকা সকল আসামিকে দুই বছরের মধ্যে সাধারণ সেলে স্থানান্তরিত করতে হবে।
রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যাসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব কারা অধিদপ্তরের।
সকল তথ্য ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রাখতে হবে, পাশাপাশি বিগত ৫৩ বছরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা কারা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
রায়ে মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে সন্তান জন্মদানের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলার পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল শুনানি চলমান অবস্থায় জামিনের আবেদন করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
আইনজীবীরা বলেছেন, এটা একটা ঐতিহাসিক রায়।
আরও পড়ুন: ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা না করার নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
এর আগে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
গত বছরের ৫ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনকারী হলেন– চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুর বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।