সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তৃক অফিস শৃঙ্খলা–পরিপন্থী কোনো কাজ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তা–ই বিভাগীয় মামলা। প্রকৃতপক্ষে বিভাগীয় মামলা প্রচলিত আদালতে দায়ের করা বা চলমান কোনো মামলা নয়। গত ১০ বছরে এ ধরনের মামলা হয়েছে ৮৬৮টি।
নিয়ম অনুসারে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এই মামলাগুলো হলে এটি ঠিক আছে কি না, বা কোনো পরামর্শ আছে কি না, তা যাচাই করার জন্য সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত জানতে চাওয়া হয়।
পিএসসি যে সর্বশেষ প্রতিবেদন পাস করেছে, সেখানে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে ৮৬৮টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে ২০১৬ সালে, ১২৩টি। আর গত বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে। গত বছরের মামলার সংখ্যা ১১৪টি। তৃতীয় সর্বোচ্চ মামলা হয় ২০১৪ সালে, ১০২টি।
মামলার বিষয়ে পিএসসির অবস্থান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেশির ভাগ মামলাতেই পিএসসি সহমত দিয়েছে। তবে কিছু মামলায় দ্বিমত পোষণ করতেও দেখা গেছে। যেমন সর্বোচ্চ দ্বিমত করেছে ২০১৪ সালে। সে বছর ৯টি মামলার বিষয়ে দ্বিমত করেছে পিএসসি। ২০২১ সালে চারটি; ২০১৫, ২০১৬ ও ২০২০ সালে তিনটি করে মামলায় দ্বিমত পোষণ করেছে পিএসসি। এ ছাড়া ২০২২ সালে দুটি মামলায় দ্বিমত করেছে পিএসসিকে।
পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর যখন তা আমাদের কাছে আসে, তখন এ ক্ষেত্রে পিএসসি দেখে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগনামা, অভিযুক্ত ব্যক্তির জবাব, সাক্ষীদের জবানবন্দি, তদন্ত প্রতিবেদন, শোকজ নোটিশ ও জবাব এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া বিদ্যমান আইন যেমন সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশ ১৯৭৯ অনুযায়ী বর্ণিত ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: শ্রম আদালতে মামলার সঙ্গে নিষ্পত্তিও বেড়েছে: প্রতিবেদন
মামলার বিষয়ে পিএসসির ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে পিএসসির পরিচালক এ বি এম মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারি চাকরির নিয়ম অনুসারে সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় মামলা হলে, সেটি ঠিক আছে কি না, মামলায় কোন ব্যত্যয় ঘটেছে কি না, কোনো সুপারিশ আছে কি না, শাস্তির সুপারিশ ঠিক কতটা ঠিক আছে, বেশি বা কম হয়েছে কি না, এমন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সরকার পিএসসির পরামর্শ নিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ওই অভিযুক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অপরাধের ধরন, মাত্রা, কোন বিধি লঙ্ঘনে বিভাগীয় ব্যবস্থা—সবকিছু পিএসসিতে পাঠায়। পিএসসি তা যাচাই–বাছাই করে মত দেয়।
পিএসসি সূত্র জানায়, পিএসসিতে বিভিন্ন ইউনিট আকারে আলাদা আলাদা বিভাগ আছে, যেগুলোর দায়িত্ব ভাগ করা আছে। একেক ইউনিট একেক মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় মামলার বিষয়ে পরামর্শ দেয়। এভাবে বিভাগীয় মামলা দায়ের হওয়া ব্যক্তির সবকিছু যাচাই–বাছাই করে পিএসসি মতামত দেয়। সব সময় যে একমত হয় তা নয়, দ্বিমতও পোষণ করে পিএসসি। এ ক্ষেত্রে পিএসসি স্বাধীন। সাধারণত নিজেরা নিরপেক্ষভাবে এ ধরনের বিষয় পরিচালনা করে পিএসসি।
বিভাগীয় মামলায় শাস্তি নির্ধারিত। কিছু মামলায় গুরুদণ্ড হয়। আবার কিছু মামলায় লঘুদণ্ড। কখনো কখনো গুরুদণ্ড দেওয়া হলেও আপিলে লঘুদণ্ড হয়। লঘুদণ্ডের মধ্যে সতর্কীকরণের মতো নামমাত্র শাস্তিও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এ শাস্তিও মাফ করে দেন রাষ্ট্রপতি। বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি ঝুলে থাকে।