মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছরা ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী সমুদ্র সৈকত ঘেষা মেরিন ড্রাইভ রোডের পাশে গড়ে তোলা হবে “বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট”।
আন্তর্জাতিকমানের এ রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য ৩ একর ৩৪ শতক অকৃষি খাসজমি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এর অনুকূলে দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সহ ১৩ জন বিচারপতি, সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আগামী শুক্রবার (১৭ মে) কক্সবাজার সফরকালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর জন্য নির্ধারিত জমি পরিদর্শনে যাবেন। সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, “বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট” স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি চেয়ে সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসন থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন টেকনাফের বাহারছরা ইউনিয়নের শীলখালী মৌজার উত্তর শীলখালী এলাকায় সমুদ্র সৈকত ঘেষা মেরিন ড্রাইভ রোডের পশ্চিম পাশে সমুদ্র সৈকতের পূর্ব পাশে বিএস ৩০২৭, ৩০২৮, ৩০২৯, ৩০৩০, ৩০৩৩, ৩০৩৪ দাগের ৩ একর ৩৪ শতক অকৃষি খাসজমি “বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট” স্থাপনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত দিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করে। যে প্রস্তাবের দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত মামলা নম্বর : ০১/২০২৩-২০২৪ (টেকনাফ)।
ভূমি মন্ত্রণালয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া প্রস্তাবটি ১৯৯৫ সালের অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালার ১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর অনুমোদন দেয়। অনুমোদন দেওয়া জমিটির জন্য নামমাত্র ১ লক্ষ ১ টাকায় প্রতীকী সেলামী নির্ধারণ করা হয়। ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রীম কোর্ট শাখায় সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষে চালানমূলে সরকারি কোষাগারে ১ লক্ষ ১ টাকা প্রস্তাবিত জমির জন্য নির্ধারিত সেলামী জমা করা হয়।
এরপর একইবছর ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের পক্ষে রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ গোলাম রব্বানী জমি গ্রহীতা হিসাবে এবং সরকারের পক্ষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জমি দাতা হিসাবে ৩ একর ৩৪ শতক অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানের রেজিস্ট্রাড চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সফরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের ১৩ বিচারক
একইদিন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ গোলাম রব্বানী’র কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পাদিত চুক্তিপত্রটির দলিল হস্তান্তর করেন।
চুক্তিপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ, কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী জজ ওমর ফারুক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবাল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মনজুর আলম সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর জন্য দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত পাওয়া জমির দখল সার্ভে করে ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অনুকূলে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম। তিনি আরো জানান, বন্দোবস্ত নেওয়া জমিতে একইসাথে আরসিসি লাল সীমানা পিলার পুঁতে জমি চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।
বন্দোবস্ত নেওয়া জমিটা সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ গোলাম রব্বানী সহ কক্সবাজার বিচার বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য বন্দোবস্ত নেওয়া জমি তত্বাবধান ও উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকির জন্য কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদকে সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসন থেকে সমন্বয়কারী হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নাজির বেদারুল আলম।
সূত্রটি জানিয়েছে, চুক্তি সম্পাদনের পর সুপ্রীম কোর্টের অনুকূলে জমিটির নামজারী খতিয়ান সৃজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার কোর্ট কম্পাউন্ডে সিজেএম ভবন নির্মাণের দাবি আইনজীবীদের
সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর জন্য বরাদ্দ পাওয়া জমির লোকেশনটা খুবই মনোমুগ্ধকর ও চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খুব সহসায় বন্দোবস্ত পাওয়া জমিতে সীমানা প্রাচীর দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সূত্র মতে, বন্দোবস্ত পাওয়া জমিতে নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেখানে থাকবে, বিচার সংক্রান্ত গবেষণার অবারিত সুযোগ। থাকবে গবেষনাধর্মী বিচারিক তথ্য উপাত্ত। থাকবে প্রাচীনকালের বিচার ব্যবস্থার নিদর্শন ও ইতিহাস সমৃদ্ধ মিউজিয়াম। সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। বিভিন্ন দেশের গবেষকদের গবেষণায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা। থাকবে, গবেষণায় নিয়োজিতদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, রিসোর্ট ও রেস্ট হাউস।
প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বমানের একটি ইনস্টিটিউট হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন অত্যাধুনিক বিচারিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোর কার্যক্রমের খোঁজ খবর নেওয়া নেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কার্যক্রমের জন্য আধুনিক প্ল্যান, ডিজাইন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামোও সৃজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সুত্র।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটটি নির্মিত হলে এটি হবে দেশের প্রথম এবং একমাত্র আইন, আদালত ও বিচার বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রাজধানীর বাইরে এটি হবে প্রথম একটি আধুনিক স্থাপনা।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় উচ্চতর গবেষণা করেন, এমন একজন গবেষক বলেছেন, দেশে অনেক আগেই বিচার বিভাগের জন্য একটি রিসার্চ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা দরকার ছিল। প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটটি দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাপনাকে আরো অনেক সুদৃঢ়, সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবে। এটি চালু হলে দেশের বিচার ব্যবস্থায় আমুল সংস্কার হবে।
দেশের সার্বিক বিচারিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানদন্ড ও উন্নত বিশ্বের বিচারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিচালনা করা যাবে। একইসাথে দেশের প্রচলিত আইনে বিরাজমান থাকা অসংগতি, সাংঘর্ষিক বিষয় ও ত্রুটি গুলো সহজে দূর করা যাবে এবং বাস্তবতার নিরিখে আইন প্রনয়ণ করা যাবে বলে মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত গবেষক।