নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত এবং অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সেলিম প্রধানের প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে আদালতের সময় নষ্ট করায় তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মে) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে সেলিম প্রধানের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ কে এম নুরুল আলম। ইসির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, ব্যারিস্টার আশফাকুর রহমান। অপর প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও ব্যারিস্টার মাহিন এম রহমান।
শুনানির শুরুতে সেলিম প্রধানের আইনজীবী তার আবেদনটি নন-প্রসিকিউশনের (মামলা না চালানো) জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানান।
তখন আপিল বিভাগ বলেন, আপনাদের জরুরি কথা বিবেচনা করে আবেদনটি আপিল বিভাগের লিস্টে আনা হয়েছে। এখন বলছেন নন-প্রসিকিউশন করবেন। সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার।
এরপর আদালতের সময় নষ্ট করায় সেলিম প্রধানকে ১০ হাজার টাকা টোকেন জরিমানা করা হয়।
এর আগে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি সেলিম প্রধান। ২৩ এপ্রিল যাচাই বাছাই শেষে মানি লন্ডারিং ও দুদকের মামলায় সাজার কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়ন বাতিল করেন।
পরে মনোনয়নের বৈধতা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর সেলিম প্রধান আপিল করলে ২৮ এপ্রিল জেলা প্রশাসক খারিজ করে মনোনয়ন বাতিল বহাল রাখেন। ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টে নিজের প্রার্থিতার বৈধতা ও প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে রিট করেন সেলিম প্রধান। হাইকোর্ট সেলিম প্রধানের প্রার্থিতার বৈধতা ও প্রতীক বরাদ্দের আদেশ দেন।
সেই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আপিল করেন রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২ মে সেলিম প্রধানের প্রার্থিতা ও প্রতীক বরাদ্দে হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন চেম্বার আদালত।
তার প্রার্থিতার বিষয়ে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ উপরোক্ত আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, তফসিল অনুযায়ী ২১ মে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
দুদকের মামলায় দণ্ডিত
জানা গেছে, দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেলিম প্রধানকে আটক করেছিল র্যাব। তার বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি মুদ্রাসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।
তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছিল, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো বা অনলাইন জুয়ার মূল হোতা। তিনি প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। সেই সঙ্গে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা হয়।
এসব মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তবে সেলিম প্রধান জামিনে রয়েছেন।
অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল সেলিম প্রধানের সাজার রায় দিয়েছেন আদালত। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের দুই ধারায় ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
যার সাজাভোগ শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে এ সাজার বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেছেন যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।