মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ন্যায় বিচার পাওয়া প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানে এর গ্যারান্টি রয়েছে। আদালতে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্যই আসে। আদালতের দায়িত্ব হচ্ছে, বিচারপ্রার্থী সকল নাগরিকের ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করা। পাশাপাশি বিচার প্রার্থীদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা।
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মিতব্য বিশ্রামাগার “ন্যায়কুঞ্জ” এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন শেষে শনিবার (১৮ মে) সকালে গণমাধ্যমের সামনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিচারপ্রার্থীদের আদালত প্রাঙ্গণে বসার কোন জায়গা ছিলোনা। সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করলে প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় দেশের ৬৪ টি জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার স্থাপনের নির্দেশ দিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেন। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আরো বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ স্থাপন করা হচ্ছে। এটা শুধু বিচারপ্রার্থীরা নয়, আদালতে সেবা নিতে আসা সকল নাগরিকেরা এটা সহজে ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি বলেন, নির্মাণাধীন ন্যায়কুঞ্জের আয়তন এক হাজার বর্গফুট। অত্যাধুনিক নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে ডিজাইন করা সুপরিসর বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জে একত্রে ৬০/৭০ জন বিচার প্রার্থীদের বসার জায়গা, ওয়াশরুম, ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার, ফাস্টফুডের দোকান, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা কক্ষে বসার ব্যবস্থা সহ বহুমুখী সুবিধা থাকবে।
এ সময় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুস রানার প্রশ্নের জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, কক্সবাজারে মাদক মামলার আধিক্য থাকায় মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আগেই নেওয়া আছে। সে বিষয়ে আরো জোর দেওয়া হবে বলে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান উল্লেখ করেন।
ন্যায়কুঞ্জ” এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন শেষে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ সোলাইমান মোনাজাত পরিচালনা করেন। পরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল কোর্ট এলাকা পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নির্বাচনী অপরাধ বিচারে ৩ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, আপীল বিভাগের বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম, আপীল বিভাগের সদ্য সাবেক বিচারপতি বোরহানউদ্দিন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাঈমা হায়দার, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে.বি.এম হাসান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবির, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস.এম কুদ্দুস জামান, সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ গোলাম রব্বানী, কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, ২ ও ৩ এর বিচারক যথাক্রমে মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, মোঃ নুরে আলম জিকু ও মোহাম্মদ আবু হান্নান, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুনসী মোঃ মশিয়ার রহমান, আপীল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, প্রধান বিচারপতির রিসার্চ এন্ড রেফারেন্স অফিসার মুহাম্মদ সরওয়ার আলম ও প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব হাসান মোঃ আরিফুর রহমান, কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আদালতের বিচারক যথাক্রমে মোঃ মহিউদ্দিন মুরাদ, মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী, মোঃ আবদুল কাদের, মোঃ মোশারফ হোসেন ও নিশাত সুলতানা, যগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম ও দ্বিতীয় আদালতের বিচারক যথাক্রমে মোঃ সাইফুল ইসলাম ও মোছাঃ রেশমা খাতুন, অতির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহজাহান, সিনিয়র সহকারী জজ সুশান্ত প্রসাদ চাকমা, সিনিয়র সহকারী জজ মৈত্রী ভট্টাচার্য, সিনিয়র সহকারী জজ ওমর ফারুক, সিনিয়র সহকারী জজ আবদুল মান্নান মারুফ, সিনিয়র সহকারী জজ মাজেদ হোসাইন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামিমুন তানজিন, মহেশখালী চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শোয়েব উদ্দিন খান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ, কুতুবদিয়া চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাঈদীন নাঁহী, চকরিয়া চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাহিদ হোসাইন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নির্মাণ করা হবে সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট : পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি
এছাড়া আইনজীবীদের মধ্যে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, সাবেক সভাপতি ও জিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ রেজাউর রহমান, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, সাবেক সভাপতি সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আমির হোসাইন, জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, এপিপি অ্যাডভোকেট খালেক নেওয়াজ, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী প্রমুখ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম জানিয়েছেন, শনিবার (১৮ মে) সকালে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার “ন্যায়কুঞ্জ” এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের পর একইদিন সকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজার জেলার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি অভিভাষণ প্রদান করেন।
এসময় চট্টগ্রাম বিভাগের অধস্তন আদালত সমুহের মনিটরিং এর দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কক্সবাজার জেলা বিচার বিভাগের বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট নিয়ে কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন ভিডিও পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান কক্সবাজার জেলা বিচার বিভাগের উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট নিরসনে এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করবেন বলে জানান।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, কক্সবাজার সফরে আসা অন্যান্য বিচারপতিবৃন্দ, সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ২ দিনের সফর শেষে একইদিন বিকেল সাড়ে ৫ টায় বিমানযোগে কক্সবাজার ত্যাগ করেন বলে জেলা নাজির বেদারুল আলম জানিয়েছেন।