ফেনীর আলোচিত ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পূর্ণ হলো আজ। এ হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার ৬ বছর পার হয়ে গেলেও তা কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে পরিবার।
মূলত দন্ডপ্রাপ্তরা রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলেও তার শুনানি এখনও কার্যতালিকায় আসেনি। ফলে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানিও আটকে রয়েছে। তবে চলতি বছরেই একরাম হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স), রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জেল আপিল-সংক্রান্ত পৃথক আবেদন সম্প্রতি হাইকোর্টে শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত হয়েছে। বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য রয়েছে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন মনে করছেন চলতি বছরই এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি হবে। তিনি বলেন, ‘মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রয়েছে। আগামী মাসের শেষদিকে শুনানি শুরু হতে পারে।’
এছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া আসামিদের সাজা নিশ্চিতে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ, যার শুনানিও ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল শুনানির সময় হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছি। হাইকোর্টের কার্যতালিকা অনুযায়ী শুনানি হবে।’
এদিকে একরাম হত্যাকাণ্ডের ১০ বছরেও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এর মধ্যে আটজন জামিনে মুক্ত হয়ে এবং আটজন হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক। অধিকাংশ আসামি দেশের বাইরে বলে দাবি পুলিশের।
আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন একরামুল হকের বড় ভাই ও মামলার বাদী জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে আসামিদের দেশে এনে রায় কার্যকর করা হোক। নয়তো ন্যায়বিচার থমকে থাকবে। একরামুল হকের তিন শিশুসন্তান পড়াশোনা করছে। তাদের জন্য হলেও আসামিদের গ্রেপ্তার করে রায় কার্যকর করা হোক।’
আরও পড়ুন: একরাম হত্যায় ৩৯ জনের ফাঁসি, মিনার চৌধুরীসহ ১৬ জন খালাস
২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় তাঁর বড় ভাই জসিম উদ্দিন হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ মামলার রায় দেন ফেনীর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনুল হক। রায়ে ৩৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারসহ ১৬ জনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
রায়ে বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে বিরোধের কারণেই একরামকে হত্যা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্সের নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও জেল আপিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পেপারবুক তৈরির পর চাঞ্চল্যকর মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে কার্যতালিকাভুক্ত হয়েছে।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৩ জন কারাগারে। পলাতক ১৬ আসামি হলো– জাহিদ হোসেন জিহাদ, আবিদুল ইসলাম আবিদ, নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রাসেল, এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান ওরফে ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলে উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মহিউদ্দিন আনিস, বাবলু ও টিটু।
ফেনী সদর মডেল থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে ওয়ারেন্ট আছে, কিন্তু তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’