উত্তরায় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানের মাদক মামলায় ৭ বছরের জেল খাটার পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে মিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির জেল খাটার বিষয় মিডিয়ার সংবাদ প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সিনিয়র এডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতে আবেদন জানালে বিষয়টি সম্পর্কে বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের আদালতে শুনানি হয়।
একাধিকবার শুনানি শেষে আজ সোমবার (২০ মে) বিচারপতি মোহাম্মদ আশরাফুল কামালের আদালত রায় দিয়েছেন।
রায়ে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নাজমুল, মিরাজুল ও ফরিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪১৯ ও ১০৯ ধারায় শাহবাগ থানায় এজাহার দায়ের করার জন্য হাইকোর্টের রেজিস্টার কে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিবিআই প্রধানকে নির্দেশনা প্রদান করেন, তবে পুলিশ সুপারের পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে।
আদালত রায়ে আরো উল্লেখ করেছেন, তদন্তকালীন ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত এমনকি আইনজীবী হলেও তাদের কেউ তদন্তের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, মামলার সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন মিডিয়ার রিপোর্ট ও এফিডেভিটে তদন্ত করাকালীন সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা উক্ত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে তদন্ত করবে।
অপর এক আদেশে আদালত বলেন কোন মামলায় আসামি আত্মসমর্পণের সময় বিচারকদেরকে আসামির পরিচয় সনাক্ত করার জন্য তার জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম সনদ বা পাসপোর্ট এর কপি দাখিলের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। আদালত অপর আদেশে পুলিশের উপর নির্দেশনা দিয়েছেন যখন কোন আসামিকে গ্রেফতার করবে বা আদলাতে সোপর্দ করবে তখন তাদের পরিচয় জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্ট এর মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে, এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপিকে একটি সার্কুলার ইস্যু করে সমস্ত পুলিশ অফিসারদেরকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: একজনের পরিবর্তে জেলে অন্যজন, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
আদালত অপর এক আদেশে আইনজীবীরা যখন কোন আসামিকে আত্মসমর্পণ করাবে তখন উক্ত পিটিশানে তিনি কিভাবে আসামি সনাক্ত করলেন তার একটি বর্ণনা থাকতে হবে। এ ব্যাপারে বার কাউন্সিলকে সকল আইনজীবীদেরকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপর আদেশে সারা দেশের জেলখানাগুলোকে আদেশ দেওয়া হয়েছে যখন কোন আসামি গ্রহণ করবেন তখন তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্ট দ্বারা সনাক্ত করবেন এবং তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে তা ভেরিফাই করবেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সকল জেল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, মূল আসামি নাজমুল আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে এবং বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
শুনানিতে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ঘটনাটি বিচার বিভাগের জন্য দুঃখজনক এবং এর মাধ্যমে জনগণের মাঝে বিচার বিভাগ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পরবে। সুতরাং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সকলকে আইনের আওতায় আনা আবশ্যক। তিনি আদালতে দন্ডবিধির ৪১৯ এবং ১০৯ ধারায়, মামলা দায়ের করার জন্য নির্দেশনা প্রার্থনা করেন। তিনি আদালতে বলেন এ ধরনের মিথ্যা মামলা দায়ের এর প্রবণতা রোধ করার জন্য আধুনিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা এবং আসামিদের প্রাথমিক স্তরে পরিচয় সনাক্ত করা আবশ্যক। ঘটনার সঙ্গে নাজমুল, মিরাজ ও ফরিদ শুধু যে তারাই জড়িত এমনটা নাও হতে পারে হয়তো এই ঘটনার সাথে আরও কোন লোক জড়িত থাকতে পারে। তাদেরকেও আইনের অওতায় আনা প্রয়োজন। এ কারণে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আবেদন জানান যাতে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার নথিতে সংযুক্ত সকল কাগজপত্র বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত সম্পন্ন করেন।
আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের ব্যাখ্যা তলব
সরকার পক্ষে ডিএজি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আসামি নাজমুল প্রকৃত আসামি হওয়া সত্ত্বেও অন্য একজনকে দিয়ে এই আপিলটি দায়ের করেছেন যেটি খারিজ যোগ্য। তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানান।
আপিলকারীর পক্ষে সিনিয়র এডভোকেট এসএম শাজাহান বলেন বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে একজনের আপিল আর একজন করেছেন সুতরাং এটা তদন্ত করা যেতে পারে এবং যারা জড়িত তারা নিশ্চয়ই আইনের আওতায় আসবেন।
আসামি নাজমুলের পক্ষে শুনানিতে এডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, কে আপিল করেছে তার পক্ষে তার কিছুই জানা নাই। তবে তিনি বলেন তার মক্কেল আইনজীবীদের ব্যাপারে অভিযোগ তুলেছেন।
আপিলকারী পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট এসএম শাহজাহান, আসামি নাজমুলের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডিএজি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
মামলায় এমিকাসকিউরি হিসেবে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।