প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, এখন মানুষ তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা করে। ফলে মামলা জট ও দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা সচেতনতা সৃষ্টি করলে এসব মামলা কমে যাবে।
আজ বুধবার (২২ মে) সকালে লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে জেলা আইনজীবী সমিতির এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় বিচার কার্যক্রমের গতিশীলতা বাড়াতে তুচ্ছ ও ছোটখাটো বিষয়ে মামলা না করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এ ছাড়া বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন ও মানোন্নয়নে আইনজীবীদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন তিনি।
আইনজীবীদের উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মামলাজট হ্রাস, বিচার বিভাগ থেকে দুর্নীতি নির্মূল ও বিচার বিভাগের কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার মানোন্নয়নসহ আধুনিকায়নে যদি কোনো পরামর্শ থেকে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আপনারা (আইনজীবীরা) লিখিত আকারে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রিতে পাঠাবেন। আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত বিবেচনায় নিয়ে আমরা বিচার বিভাগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি জুডিশিয়াল প্ল্যান প্রস্তুত করতে চাই।’
আইন পেশায় সফলতার জন্য কোনো সংক্ষিপ্ত রাস্তা নেই জানিয়ে ওবায়দুল হাসান বলেন, একজন সফল আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সারা জীবন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। আইন পেশায় সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে প্রয়োজন একাগ্র নিষ্ঠা, সততা, সময়ানুবর্তিতা, ধৈর্য, পরিশ্রম করার মানসিকতা ও নিরন্তর অধ্যয়ন। সঠিক সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আইনি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে আদালতকে সহায়তা করাই প্রকৃত আইনজীবীর কর্তব্য।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আইন পেশা মহান একটি পেশা। এই পেশার মাধ্যমে একজন আইনজীবী সরাসরি নিজেকে অসহায় মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে পারেন। তাই আইন পেশাকে নিছক জীবিকা নির্বাহের একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা না করে অধিকারবঞ্চিত মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করার একটি উপায় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। কেবল তবেই আইনজীবী হিসেবে যে পরিচয় রয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে সার্থকতা পাবে।
আরও পড়ুন: অপরাধ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির উন্নয়ন করতে হবে: প্রধান বিচারপতি
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল হাসান বলেন, মামলার জট কমাতে বিচার বিভাগ কাজ করছে। মানুষ এখন হাঁস ও মুরগির ধান খাওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনায় মামলা করে বসে। এগুলো নিরুৎসাহিত করতে হবে। এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। এতে মামলাজট ও দীর্ঘসূত্রতা কমে আসবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ছোটখাটো বিষয়ে মামলা না করলে মামলার সংখ্যা কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে সংবাদপত্র তথা মিডিয়া সচেতনতামূলক ভূমিকা নিতে পারে। এর পাশাপাশি মামলার সংখ্যা কমাতে লিগ্যাল এইড কর্তৃপক্ষের ভালো ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। মোদ্দাকথা, ছোটখাটো বিষয়ে বা তুচ্ছ বিষয়ে বা কথায় কথায় মামলা-মোকদ্দমা না করলে মামলার সংখ্যা কমে যাবে। এ জন্য এমন বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনা করে সমাধানের জন্য সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।’
মতবিনিময় সভাটিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. ইকবাল কবির ও লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ মো. মিজানুর রহমান। সভায় সভাপতিত্ব করেন লালমনিরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও লালমনিরহাট-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. মতিয়ার রহমান।
এ সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন লালমনিরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সফুরা বেগম এবং লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আকমল হোসেন আহমদ।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ, লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনজীবী সমিতির সদস্যরা।
এর আগে আজ সকালে লালমনিরহাট আদালত প্রাঙ্গণে নবনির্মিত বিশ্রামাগারের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।