প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আইনজীবীদের সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। আমাদের স্থানীয় আদালত শুরু হওয়ার কথা সকাল ৯টায়। তাই আমি আইনজীবীদের অনুরোধ করবো তারা যেন সময় মেইনটেইন করে আদালতে উপস্থিত হন। আর আমি বিচারকদের অনুরোধ করবো তারা যেন নির্ধারিত সময়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। যাতে করে আমরা প্রতিদিন অন্তত ৪-৫টি মামলা নিষ্পত্তি করতে পারি।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় নীলফামারী জেলা জজ আদালতে বিচারপ্রার্থী ও সাক্ষীদের বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ও বিশ্রাম করতে পারবে সেই জন্য এই ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠার পেছনে আমার পূর্বসূরির অবদান যথেষ্ট। তিনি চিন্তা করেছিলেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারা বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রজেক্ট হাতে নেন। তারই অংশ হিসেবে নীলফামারীর এই ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠা হলো।
তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থী মানুষ যারা এখানে আসেন ন্যায়বিচার পাওয়া তাদের একটি সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার। এই অধিকার তারা যখন প্রয়োগ করতে আসেন আদালতে, এসেই তারা এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে। তাদের সুপেয় পানির জায়গা থাকে না, তাদের কিছু কেনাকাটারও জায়গা থাকে না। তাদের শৌচাগার ব্যবহার করার সুযোগ ছিল না। এই ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সুপেয় পানি, তাদের জন্য একটি স্টোর ও দুটি বাথরুম করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা রয়েছে। মায়েরা শিশুদের দুগ্ধপান করাতে পারবেন সেই ব্যবস্থা এখানে আছে।
আরও পড়ুন: ‘মানুষ তুচ্ছ বিষয়ে আদালতে মামলা করে, ফলে মামলা জট ও দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়’
তিনি আরও বলেন, মানুষের কল্যাণে জাতির জনকের কন্যা কাজ করে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে আমরা যারা বিচার বিভাগে আছি আমিসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা এবং স্থানীয় বিচারকরা যারা আছেন তারা সকলেই দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের আইনজীবীরা যারা আছেন তাদেরকে বলবো, বেঞ্চ এবং বারের সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আমি বিজ্ঞ আইনজীবীদের বলব আপনারা বেঞ্চ ও বারের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করবেন। আমি বিচারকদের বলব আপনারা বেঞ্চ ও বারের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলার জট কমানো একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। মামলার জট কমাতে যে পরিমাণ বিচারকের প্রয়োজন তার সংকট রয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন আদালত ও স্থানীয় আদালত নিদারুণ চেষ্টা করছে যাতে মামলার ডিসপোজাল বাড়ানো যায়। এজন্য আমরা একটি কমিশন গঠন করেছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহমুদুল করিমের সভাপতিত্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম সারোয়ার ও এ.বি.এম গোলাম রসুল, জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ, পুলিশ সুপার গোলাম সবুর, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মমতাজুল হকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধান বিচারপতিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বিচার বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ।