সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বলেছেন, প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা পুরোনো হয়ে গেছে। এই পদ্ধতি মামলাজট কমাতে পারছে না। তাই মামলাজট নিরসন করতে চাইলে বিচার ব্যবস্থায় মেডিয়েশন পদ্ধতিকে মেইনস্ট্রিম পদ্ধতি হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে ৪০ লাখ মামলা বিচার ব্যবস্থায় জট সৃষ্টি করেছে, দেশের সব বিচারক দিন রাত কাজ করলেও ৩০ বছরে এই মামলাজটের নিরসন হবে না। একমাত্র মেডিয়েশন পদ্ধতির প্রয়োগ মামলাজট নিরসনে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে শুক্রবার (২৪ মে) বিকেলে বাংলাদেশ ও নেপালের অ্যাক্রিডিটেড মেডিয়েটর প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিচারপতি আশরাফুল কামাল বলেন, আইন করে পারিবারিক বিরোধ সংক্রান্ত সব মামলা মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাহলে মামলাজট দ্রুত কমে যাবে।
তিনি জেলায় জেলায় লিগ্যাল এইডের কার্যক্রমকে জোরদার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমানে প্রতি জেলা লিগ্যাল এইডে একজন অফিসার বিরোধ নিষ্পত্তির দায়িত্ব পালন করেন। মামলাজট নিরসন করতে চাইলে প্রতি জেলায় ১০ জন করে লিগ্যাল এইড অফিসার প্রয়োজন। তারা মেডিয়েশনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করবেন।
বিশেষ অতিথি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আহমেদ সোহেল বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিচার ব্যবস্থায় মেডিয়েশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে মামলাজট নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশেও মামলাজট থেকে রেহাই পেতে হলে মেডিয়েশনের বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আইনজীবীদের সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন
তিনি বলেন, মেডিয়েশন আন্দোলনকে জোরদার করতে প্রত্যেক জেলায় মেডিয়েশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে মেডিয়েশন নিয়ে কাজ করার জন্য ঢাকায় একটি ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সেন্টার গড়ে তুলতে হবে।
বিচারপতি সোহেল বলেন, বিচার ব্যবস্থায় মেডিয়েশন পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে বাংলাদেশকে মেডিয়েশন সংক্রান্ত সিঙ্গাপুর কনভেনশনে স্বাক্ষর সময়ের দাবি।
তিনি অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় সংসদের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার ফারজানা ছাত্তার এমপিকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আশা করি আপনি জাতীয় সংসদে সিঙ্গাপুর কনভেনশনে স্বাক্ষরের বিষয়টি তুলে ধরবেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনবেন।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় সংসদের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার ফারজানা ছাত্তার এমপি বলেন, মেডিয়েশন নতুন কোনও বিষয় নয়। ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক আগে থেকে বিভিন্ন নামে মেডিয়েশন পদ্ধতি চালু আছে। আমি বিশ্বাস করি মেডিয়েশনের মাধ্যমে মামলাজজট নিরসন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল কম সময়ে মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। মেডিয়েশনের মাধ্যমে এটা সম্ভব।
ব্যারিস্টার ফারজানা ছাত্তার অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে আশ্বস্ত করে বলেন, বিচার ব্যবস্থায় মেডিয়েশন পদ্ধতির প্রয়োগ আরও কীভাবে বাড়ানো যায় এবং সিঙ্গাপুর কনভেনশনে স্বাক্ষরের বিষয়টি জাতীয় সংসদে তুলে ধরব এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনব।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিমসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এন গোস্বামী, নীলফামারীর ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মতিউর রহমান, বিমস ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি প্রিয়াংকা চক্রবর্তীসহ অনেকে।