জান্নাতুল ফেরদৌস পুলক: প্রবাসী সাত্তার সাহেবের একমাত্র কন্যা সাদিয়া। সাদিয়া প্রাপ্ত বয়স্ক এবং অবিবাহিত। সাত্তার সাহেবের দুই ভাই- এবং ভাইদ্বয়ের ছেলে সন্তান রয়েছে। যেহেতু উত্তরাধিকার সূত্রে সাত্তার সাহেব অঢেল সম্পত্তির মালিক, তিনি চেয়েছিলেন জীবিত অবস্থায় তার সম্পদের পুরোটাই কন্যা সন্তানকে দান করে যেতে। কিন্তু ঘটনার সূত্রপাত প্রবাসী সাত্তার সাহেবের হঠাৎ মৃত্যুর পর। সাত্তার সাহেবের দুই ভাই তার পুরো সম্পত্তি দখল করে বসে এবং সম্পত্তির অংশ কন্যা সন্তান এবং স্ত্রী প্রাপ্য হয়না বলে বুঝ দিয়ে সাত্তার সাহেবের কন্যা এবং স্ত্রী কে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে।
কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন কি বলে এই বিষয়ে!
বর্তমানে খুব পরিচিত একটি ছবি হচ্ছে, কোনো ব্যক্তির যদি ছেলে সন্তান না থাকে সেক্ষেত্রে বাবার মৃত্যুর পর তার সম্পদের বড় অংশ বাবার ভাইদের দখলে চলে যায়। এক্ষেত্রে কন্যা সন্তানের যতটুকু পাওয়ার অধিকার রয়েছে সেটাও তারা পান না। অথবা অনেক ক্ষেত্রে বাবা জীবিত থাকলে ও কন্যা সন্তানকে সম্পত্তির ভাগ বা প্রাপ্যটুকু দিতে চান না।
কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির যদি একটি মাত্র কন্যা সন্তান থাকে, সে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক, সে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। আর যদি- একাধিক কন্যা সন্তান থাকে, ছেলে সন্তান না থাকে এক্ষেত্রে মেয়েরা তার বাবার মোট সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ পাবে। অর্থাৎ এই দুই তৃতীয়াংশ কন্যা সন্তানদের সমান ভাগে ভাগ করে দিতে হবে।
মৃত ব্যক্তির স্ত্রী যদি জীবিত- না থাকেন, কন্যা সন্তান পুরো সম্পত্তির অর্ধেক পাবেন। স্ত্রী জীবিত থাকলে সম্পত্তির এক অষ্টমাংশ স্ত্রী পাবে, কন্যা সন্তান অর্ধেক পাবে এবং এরপর বাকি সম্পত্তি অন্য ওয়ারিশরা পাবে।
মৃত ব্যক্তির ভাই বোন জীবিত না থাকলে, ভাই বোনের ছেলেরা সম্পত্তির ভাগ পাবে। আপন ভাই বোন না থাকলে সৎ ভাই-বোন- অথবা তাদের পুত্র সন্তান সম্পত্তির ভাগ পাবে। মৃত ব্যক্তির কন্যা তখনই কেবল পুরো সম্পত্তি পাবে যখন মৃত ব্যক্তির অন্য কোনো ধরনের ওয়ারিস না থাকবে।
জীবিত অবস্থায় কন্যা সন্তানকে দান করা যাবে কিনা
বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি চাইলে ছেলে এবং মেয়েকে সমান ভাগে সম্পত্তি ভাগ করে দিতে পারবেন দানের মাধ্যমে এবং সকল আইন মেনে। যদি ছেলে সন্তান না থাকে তবে এক বা একাধিক কন্যা সন্তানকে ও একই পন্থায় দান করে যেতে পারবেন। তবে বাবা জীবিত থাকা অবস্থায়-ই দান কার্যকর করতে হবে, অবশ্যই ঘোষিত হতে হবে এবং অবশ্যই নিবন্ধন করে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে।
অপরদিকে সম্পত্তি উইল করে ও দিতে পারবেন। উইল কার্যকর হয় উইলকারীর মৃত্যুর পর। তবে এক্ষেত্রে কন্যা সন্তানকে সম্পূর্ণ সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যাবে না। নির্ধারিত- পরিমানের বেশি উইল করতে চাইলে অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের সম্মতি লাগবে।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে প্রায় সকল ক্ষেত্রে ই ছেলে মেয়ের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে ও যথেষ্ট পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে কন্যা সন্তানের সম্পদ ভাগ বা এ বিষয় নিয়ে সমান অধিকারের আইনে পরিবর্তন আনা যায়নি। এক্ষেত্রে আইনের সংশোধনের পূর্বে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা ভীষণ জরুরী।
লেখক: শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট।