আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনজীবীকে মারধরের অভিযোগ তদন্তে ৩ বিচারকের কমিটি
আদালত ভবন, চট্টগ্রাম

ছোট ভাইকে বড় ভাই সাজিয়ে জামিন, প্রকৃত আসামি খোঁজার নির্দেশ আদালতের

মানব পাচারের একটি মামলায় জামিনের জন্য ছোট ভাইকে বড় ভাই সাজিয়ে আদালতে দাঁড় করানো হয়। আদালত প্রকৃত আসামি ভেবে জামিনও দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সবার নজরে আসে। এখন আদালত প্রকৃত আসামি কে, তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস বৃহস্পতিবার (৩০ মে) এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আলাউদ্দিন দাবি করা এই মামলার আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন বিচারক।

বাদীর আইনজীবী আরিফ মঈনুদ্দীন বলেন, প্রকৃত আসামি কে আলাউদ্দিন নাকি রফিকুল ইসলাম, তা তদন্তের জন্য আদালত রামু থানা-পুলিশকে নির্দেশ দেন। জামিনে থাকা আলাউদ্দিন দাবি করা আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আলাউদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার উজানটিয়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ারা জারি করেন।

পরের বছরের ২৮ অক্টোবর উচ্চ আদালতের একটি দ্বৈত বেঞ্চে আলাউদ্দিনের (২২) বদলে তাঁর ছোট ভাই রফিকুলকে (১২) দাঁড় করানো হয়। আদালত ১২ বছর বয়সী শিশু রফিকুলকে আলাউদ্দিন মনে করে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

আরও পড়ুন: মানব পাচারের ‘সাজানো’ মামলায় শিশু আলাউদ্দিনকে জামিন দিলো হাইকোর্ট

ওই সংবাদের ছবিতে দেখা গেছে, আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীর সঙ্গে আলাউদ্দিনের জায়গায় রফিকুল ইসলাম ও তার মা রাজিয়া বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। ২২ বছরের তরুণ আলাউদ্দিনের জায়গায় ১২ বছরের শিশু রফিকুলের ছবি দেখে রামুর বাসিন্দারা অবাক হন।

এরপর বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তৎপর হলে আলাউদ্দিন উধাও হয়ে যান। সঙ্গে রফিকুল, মা রাজিয়া বেগমসহ পরিবারের সবাই আত্মগোপন করেন। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ছোট ভাইকে দেখিয়ে বড় ভাইয়ের জামিন, লাপাত্তা দুজনই’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২০ জুন আলাউদ্দিনসহ অন্য আসামিরা মালয়েশিয়ায় ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মামলার বাদী নুরুল ইসলামকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজারের দরিয়ানগর উপকূলে নিয়ে যান। সেখান থেকে নুরুল ইসলাম ও একই এলাকার হেলালউদ্দিনকে ট্রলারের মাধ্যমে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। কয়েক দিন পর জাহাজটি থাইল্যান্ড উপকূলে তাঁদের নামিয়ে দেয়।

সেখানকার দালালেরা তাঁদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। এরপর ওই দুজনকে মালয়েশিয়ায় দালালের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের জুনে মালয়েশিয়া পুলিশ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।

এক বছর কারাভোগের পর বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে নুরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনে। এরপর ২৯ অক্টোবর আলাউদ্দিনসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে একটি মামলা করেন নুরুল ইসলাম।