কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এলে তাঁর কাজ করা কঠিন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির যাত্রা শুরু

কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এলে তাঁর পেশা পরিচালনা করা কঠিন হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ক এক আলোচনায় অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এই আলোচনার আয়োজন করে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নীতিমালার আলোকে যৌন হয়রানি–সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, অনুসন্ধান ও সুপারিশের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি কমিটি গঠন করেছে। সমিতির তৎকালীন কার্যনির্বাহী কমিটি গত ৩১ মার্চ আইনজীবী জেসমিন সুলতানাকে সভাপতি করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি গঠন করে।

কমিটির অপর সদস্যেরা হচ্ছেন- অ্যাডভোকেট রমজান আলী সিকদার, অ্যাডভোকেট রেহানা সুলতানা, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক, অ্যাডভোকেট আঞ্জুমান আরা রানু, ব্যারিস্টার হারুন-অর-রশিদ, অ্যাডভোকেট নিঘাত সীমা (বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি), অ্যাডভোকেট মাহবুবা আক্তার (বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট), অ্যাডভোকেট শবনম মোস্তারী এবং অ্যাডভোকেট মাহমুদা আফরোজ মনি।

আরও পড়ুন: যৌন হয়রানি রোধে সুপ্রিম কোর্টের কমিটি পুনর্গঠন

সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হাইকোর্টের রায়ে বলা ছিল— কোনো নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত এটিকে (রায়) আইন হিসেবে মেনে চলতে হবে। তাই এটি (রায়) মেনে চলা আমাদের জন্য আবশ্যিক। তবে সুপ্রিম কোর্টে এমন কোনো ঘটনা (যৌন হয়রানি) ঘটতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। হয়ত ভবিষ্যতে কি হবে, তা জানি না। কমিটি (যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি) দায়িত্ব নিয়েছে, তারা বিষয়টি দেখবে। বারের (সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি) গত কমিটি এই উদ্যোগ নিয়েছে, বর্তমান কমিটি তার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিটি কাজের ধারাবাহিকতা থাকা উচিত।

অ্যাটর্নি জেনারেল আইনজীবীদের সতর্ক করে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এখানে আমরা সবাই বন্ধুর মতো কাজ করি। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা সবাই সচেতন। আরেকটা কথা বলে রাখি, কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ (যৌন হয়রানির) যদি আসে তাহলে তিনি কিন্তু আর এই পেশায় থাকতে পারবেন না। কারণ তাকে আর কেউ বিশ্বাস করবে না। তাকে হেয় হতে হবে। ফলে কাজ (আইন পেশা) করাটা তার জন্য দুরূহ হয়ে যাবে। এই কথা মাথায় রেখে আমার মনে হয় না এখনো এই ধরনের কোনো অভিযোগ এসেছে। কারণ আইনজীবীরা অনেক সচেতন। এখানে বোনেরা যেমন কাজ করেন, তেমনি ভাইয়েরাও কাজ করেন। সবাই আমরা পারস্পরিক ও বন্ধুত্ত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই কাজ করি। তাই আশা করছি, এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না।

‘তবে ভবিষ্যতে যদি কখনো এমন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে আপনারা (যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা) সচেতনভাবে বিষয়টি তদন্ত করবেন এবং রায়ের আলোকে যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই সমিতি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কারো কাজের ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে না এলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। তাই কারো চলার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। এই ধরনের কাজ (যৌন হয়রানি) হচ্ছে মানুষের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, কাজকে নিরুৎসাহিত করা।’

আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি : হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের নির্দেশ

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আইনজীবী হিসেবে যখন কোর্টে আসি তখন এই কোর্টে মাত্র ৩/৪জন নারী আইনজীবী কোর্টে আসতেন। তখন পুরুষ আইনজীবীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০/৭০০ এর মতো। এখন অনেক অনেক নারী আইনজীবী প্রাকটিসে আসছেন, আপিল বিভাগেও তিনজন নারী বিচরপতি ছিলেন যারা অবসরে গিয়েছেন। এখনো একজন নারী বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন। তাই তাদের উৎসাহ জোগাতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মানসিক হয়রানি করা যাবে না। কারো বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানির অভিযোগ উঠলে সেটিও দেখবেন। অভিযোগ পেলে সঠিকভাবে তদন্ত করে কাজ করবেন। সঠিক তথ্য সামনে এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আইনজীবী জেসমিন সুলতানার সঞ্চালনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক ও সাবেক সম্পাদক মো. আবদুন নূর এবং আইনজীবী রেহানা সুলতানা প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। এসময় কমিটির সকল সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেন।

শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে রায় দেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ রায়ে হাইকোর্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ গ্রহণের জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটিসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।