এবার ব্যাংকের লকার থেকে গায়েব হওয়া স্বর্ণের মালিকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ ইউনুছ বাদী হয়ে বুধবার (৫ জুন) বিকালে চকবাজার থানায় এই জিডি করেছেন। এতে ভুক্তভোগী রোকেয়া আক্তার বারীকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘বুধবার বিকালে ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার এক কর্মকর্তা ব্যাংকের পক্ষে জিডিটি করেছেন। এতে রোকেয়া আক্তার বারীকে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে জিডিটি যথাযথ আইন মনে তদন্ত করবে পুলিশ।’
ওসি বলেন, ‘ওই নারী গত সোমবার রাতে লিখিতভাবে চকবাজার থানায় একটি অভিযোগ করেন। এতে তিনি ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণ গায়েব হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ার কারণে দুদকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ ইউনুছের দায়ের করা জিডিতে বলা হয়, ‘লকার ভাড়া গ্রহণকারী রোকেয়া আক্তার বারী। যার লকার হিসাব নম্বর ৭৯ এবং লকার চেম্বর নম্বর ৪৪/১৩। গত ২০০৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই লকার বাৎসরিক ভাড়ার ভিত্তিতে তিনি এবং তার মেয়ে নাসিয়া মারজুকা ভাড়া নেন। নিয়ম অনুযায়ী তাকে লকারের মূল চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। লকার হিসাবটি তিনি ও তার মেয়ের যেকোনও একজনের স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে বলে ঘোষণা রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছরের অধিক সময় তারা এই লকার ব্যবহার করে আসছেন। লকারে কী মালামাল থাকে ও তার পরিমাণ সম্পর্কে একমাত্র গ্রাহক ব্যতীত ব্যাংক বা অন্য কোনও ব্যক্তির জানার সুযোগ নেই। চুক্তি মোতাবেক লকার ভাড়া প্রদানকারী এবং ওই গ্রাহক ভাড়া গ্রহণকারী হিসেবে বিবেচিত হন।’
আরও পড়ুন: লকারের মালামাল খোয়া গেলে ক্ষতিপূরণ কত, কী আছে আইনে
এতে আরও বলা হয়, ‘গত ৮ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে ওই গ্রাহক লকার ব্যবহারের জন্য সঙ্গে শপিং ব্যাগসহ লকার রুমে প্রবেশ করেন। আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে মাস্টার চাবি দিয়ে লকার আনলক করে দিই। এরপর গ্রাহক তার কাছে রক্ষিত মূল চাবি দিয়ে লকার খুললে আমি রুমের বাইরে চলে আসি। তার কাজ সম্পাদন করে সঙ্গে আনা শপিং ব্যাগসহ লকার রুম ত্যাগ করেন। আমরা যথারীতি লকার রুমের মূল ফটক বন্ধ করে দিই। তার ভাড়াকৃত লকারে কী রেখেছেন বা লকার থেকে কী নিয়ে গেছেন, সে বিষয়ে ব্যাংকের অবহিত হওয়ার কোনও অবকাশ নেই। লকার ব্যবহার শেষে শুধুমাত্র লকার হোল্ডারের চাবি ব্যবহার করে লকার বন্ধ করা হয়। এ কারণে লকার রুমে আমাদের কারও উপস্থিতির প্রয়োজন পড়ে না এবং বিধানও নেই।’
জিডিতে আরও বলা হয়, ‘গ্রাহকের প্রাইভেসি রক্ষার্থে লকার রুমের ভেতরে সিসি ক্যামেরাও থাকে না। গত ২৯ মে লকার হোল্ডার তার লকার চেম্বার ব্যবহার করতে আসলে যথা নিয়মে আমি এবং ওই লকার হোল্ডার দুপুর ১টা ২২ মিনিটে প্রবেশ করি। লকার হোল্ডার তার নির্ধারিত লকারের শাটার খোলা বলে জানালে আমরাও লকার পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পাই, লকারের শাটারের লিভারটি লকড অবস্থায় থাকলেও তা নির্দিষ্ট ছিদ্রে প্রবেশ না করায় লকারের দরজাটি আংশিক খোলা ছিল। কিছুক্ষণ পর হোল্ডার মৌখিকভাবে জানান ১৫০ ভরি স্বর্ণ নেই। ইতোমধ্যে হোল্ডারের অনুরোধে চকবাজার থানার পুলিশ ফোর্স সরেজমিনে লকার রুম পরিদর্শন করে এবং আমাদের কাছ থেকে লকার খোলা-বন্ধ করার পদ্ধতি জেনে নেন।’
আরও পড়ুন: ১৫% কর দিয়ে জমি, ফ্ল্যাট ও কালো টাকা সাদা করা যাবে
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে লকার সঠিকভাবে বন্ধ করা না করার দায় সম্পূর্ণ গ্রাহকের ওপর বর্তায়। সম্প্রতি আমরা দেখছি, ওই গ্রাহক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগের পরিবর্তে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মতো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রয়াস চালাচ্ছেন।’
এদিকে, ১৪৯ ভরি স্বর্ণ গায়েব হওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী রোকেয়া আক্তার বারী বাদী হয়ে সোমবার রাতে লিখিতভাবে চকবাজার থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, লকারে আমার ও আমার মেয়েসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের ১৬০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। গত ২৯ মে দুপুর দেড়টায় আমার কিছু স্বর্ণালঙ্কার আনার জন্য ব্যাংকে যাই। লকারের দায়িত্বরত অফিসার ইউনুসকে আমার লকার খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তিনি লকার কক্ষের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক অফিসার আমার নামে বরাদ্দকৃত লকারটি খোলা দেখতে পান। আমাকে বললে আমি দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ি। লকারে রক্ষিত ১৬০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে ১৪৯ ভরি চুরি হয়ে যায়। লকারে মাত্র ১১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে আছে হাতের চুড়ি ৪০ পিস ৬০ ভরি, জরোয়া সেট চারটি ২৫ ভরি, গলার সেট একটি ১০ ভরি, গলার চেইন সাত পিস ২৮ ভরি, আংটি ২৫ পিস ১৫ ভরি এবং কানের দুল ৩০ জোড়া ১১ ভরি।