দক্ষিণ এশিয়ার বিচার বিভাগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ অঞ্চলের দেশগুলোর বিচার বিভাগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে শনিবার (৮ জুন) আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন জুডিসিয়ারি অ্যাক্রোস দ্য বর্ডারস (টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্সেস ফ্রম দ্য হিমালয়স অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে তিনি এ আহ্বান জানান।
এই সম্মেলনের প্রথম সেশন এদিন সকালে ও দ্বিতীয় সেশন বিকালে অনুষ্ঠিত হয়। দুটি সেশনেই সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বন্ধু প্রতিম দুই রাষ্ট্র নেপাল ও ভুটানের বিচারপতিরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভুটান ও নেপাল কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বাধীনতার স্বীকৃতিদানের ইতিহাস স্মরণ করেন। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ‘পিপলস জুডিসিয়ারি’র ওপর গুরুত্বারোপ করে আমাদের বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়নে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেটে সুপ্রিম কোর্টের জন্য বরাদ্দ ২৪৮ কোটি টাকা
এর আগে সকালে প্রথম সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং তা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। সংবিধান অনুযায়ী, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাই দেশে আজ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রথম সেশনের বিশেষ অতিথি ভুটানের হাইকোর্টের বিচারপতি লোবজাং রিনজিন ইয়ার্গে বলেন, ব্যক্তির মানবাধিকার রক্ষায় আইনের শাসন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের মূলভিত্তি। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সবাই আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী— এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি বাস্তবায়ন করা না হলে আইন ন্যায়বিচারের পরিবর্তে অবিচারের উৎস হয়ে ওঠে।
সকালের এই সেশনে আরও বক্তব্য রাখেন— আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন।
পরে বিকালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, আজকের এই সম্মেলন এ অঞ্চলের জন্য একটি কার্যকরী বিচার ব্যবস্থার পথ খুলতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মৌলিক স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্র বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দ্বিতীয় সেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নেপালের প্রধান বিচারপতি বিসম্ভর প্রসাদ শ্রেষ্ঠা। এই অধিবেশনে তিনি নেপালের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের নানা দিক বর্ণনা করেন। এছাড়া প্রতিটি দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। সেইসঙ্গে এ ধরনের সম্মেলন এ অঞ্চলের দেশগুলোর বিচার ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন নেপালের প্রধান বিচারপতি।
দ্বিতীয় সেশনে আরও বক্তব্য রাখেন— আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আজমালুল হোসেন (কেসি)।
দুটি সেশনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিরা, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক ও বর্তমান বিচারপতিরা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারসহ কর্মকর্তারা।