‘রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ’। দেশের কারাগারের স্লোগান এটি। আলোর পথ দেখানোর অংশ হিসেবে বন্দিদের নানা কাজকর্ম শেখায় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানেই এসব কাজকর্ম করে আয় করতে পারেন বন্দিরা। শুধু তাই নয়, কারাগারে পাওয়া প্রশিক্ষণ পরবর্তী মুক্ত জীবনেও তাদের দেখায় উপার্জনের পথ।
বন্দিদের জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) ভেতরে উৎপাদন শাখা ভবনে ছোট একটি পোশাক কারখানা আছে। সেখানে কাজ করেন ৩০০ বন্দি। ওই কারখানায় তৈরি করা পোশাক রপ্তানি হয় বিদেশেও।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষের কাছ থেকে এ তথ্য জানা যায়। তিনি বলেন, কারাগারের ভেতরে বন্দিদের বিভিন্ন পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেমন পোশাক, বেনারসি ও জামদানি শাড়ি, জুতা তৈরি, শো-পিস বানানোর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কম্পিউটার চালানো শেখানো হয়। একইসঙ্গে টেলিভিশন, রেডিও, রেফ্রিজারেটর, ফ্যান, এয়ার কন্ডিশন মেরামতসহ বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি সার্ভিসিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সিনিয়র জেল সুপার বলেন, বন্দিদের জন্য কারাগারে মাদকবিরোধী মোটিভেশন, ধর্মীয় মোটিভেশন, মেডিটেশন ও গণশিক্ষার ব্যবস্থা আছে। যাতে কারাগার থেকে বন্দিরা মুক্তি পেয়ে হতাশায় না ভোগেন।
তিনি আরও বলেন, এ প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজেরাই যেন কাজ করে খেতে পারেন। পাশাপাশি সেসব বন্দি মুক্তির পর আবারও যেন অপরাধের দিকে ধাবিত না হন, সে বিষয়ে তাদের মানসিকভাবে গড়ে তোলা হয়। এমন অনেক বন্দি আছেন, কারাগারে থেকে নানা কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাইরে বের হয়ে তারা নিজেরাই ছোটখাটো কারখানা দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। আগের অপরাধ তারা ভুলে গিয়ে নতুন জীবন গড়ে তুলেছেন।
সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, কারাগারের ভেতরে উৎপাদন শাখা ভবনে সব মেশিনপত্র নিয়ে ছোটখাট একটি পোশাক কারখানা আছে। সেখানে ৩০০ বন্দি কাজ করে থাকেন। বিদেশি বায়ারের কাছ থেকে যারা পণ্য তৈরির অর্ডার নেয় তাদের কাছ থেকে আমরা অর্ডার নিয়ে সেগুলো তৈরি করে দেই। সেসব সাব-কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে কারাগারে তৈরি পোশাকপণ্য দেশের বাইরে যায়।
ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সনদ পেলেন শতাধিক বন্দি
এদিকে বিভিন্ন পণ্য তৈরির বিষয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শতাধিক বন্দিকে সনদ তুলে দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১০ জুন) ওই বন্দিদের সনদ দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণে অংশ নেন মোট ১২২ জন বন্দি। তাদের মধ্যে কৃতকার্য হন ১০৭ জন। এদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে সিনিয়র জেল সুপারের পাশাপাশি ছিলেন জেলার নাশির আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
জানা যায়, পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে কারাগার হস্তান্তর হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ শেষে মোট এক হাজার ৬৪২ জন বন্দিকে সনদ দেওয়া হয়।