পুলিশ ফাঁড়িতে আইনজীবীকে পেটালেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি!

পুলিশ ফাঁড়িতে আইনজীবীকে মারধরের ঘটনায় আদালতে মামলা

যশোর শহরের দড়াটানাসংলগ্ন কসবা পুলিশ ফাঁড়িতে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমানকে (মুকুল) মারধরের ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান।

বিচারক গোলাম কিবরিয়া মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামসহ (মিলন) দুজনকে আসামি করা হয়েছে।

আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান যশোর নারী, শিশু ও মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি)।

গত রোববার রাত ১০টার দিকে শহরের দড়াটানাসংলগ্ন এলাকায় কসবা পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরে তিনি মারধরের শিকার হন। গতকাল সোমবার বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকালে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আইনজীবী ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন আইনজীবীরা। মানববন্ধন থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি করা হয়েছে।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, জেলা আইনজীবী সমিতির দ্বিতীয় ভবনের সামনের ফুটপাতে কিছু ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী টেবিল পেতে কাপড় বিক্রি করেন। সেখানে এক ব্যবসায়ীকে জোর করে উঠিয়ে, শাহীন নামের নতুন এক ব্যবসায়ীকে বসিয়ে দেন শহিদুল ইসলাম।

এ সময় শাহীন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নির্দেশে তিনি এ টেবিল বসিয়েছেন। এটা কেউ ওঠালে তার হাত কেটে নেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ পার্শ্ববর্তী পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দেন। বিষয়টি মীমাংসার জন্য রোববার রাতে পুরাতন কসবা ফাঁড়ির এসআই হেলাল মীমাংসার জন্য শাহীনসহ অন্য ব্যবসায়ীদের ডেকে পাঠান। একই সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমানকে ফাঁড়িতে ডেকে নেওয়া হয়।

হঠাৎ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম একদল যুবক নিয়ে ফাঁড়িতে যান। মোস্তাফিজুর রহমানকে ‘ধান্দাবাজি করিস’ বলে তিনি মারপিট শুরু করেন। বাড়াবাড়ি করলে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতির সংবাদ সম্মেলন

এদিকে আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম। তিনি মোস্তাফিজুর রহমানকে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘পিপি মোস্তাফিজুর রহমান ফুটপাতের অবৈধ দোকানদারদের কাছ থেকে হিস্যা (টাকা) খায়। ওই ফুটপাতে শাহীন নামে এক কর্মী দোকান দিতে গেলে, তাকে বাধা দেন তিনি। পরে পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দেওয়া হয়। আমি শাহীনকে পুলিশ ফাঁড়িতে যেতে বলেছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর পিপি মোস্তাফিজুর পুলিশ দিয়ে দোকানদার শাহীনকে বেদম মারপিট করান। খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। থানার ওসি ফোন করে জানিয়েছেন, যা হওয়ার হয়েছে। বিষয়টি তাঁরা দেখছি। এরপর সেখান থেকে চলে আসি।’

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মোস্তাফিজুর আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে আমরাও পাল্টা মামলা করব। শাহীন নামের ওই কর্মীকে বেদম মারপিট করেছেন মোস্তাফিজুর। তাঁর মেডিকেল সার্টিফিকেট আছে।’

সংবাদ সম্মেলেন শাহীন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি নির্যাতনের বর্ণনা দেন।