কক্সবাজারে ৩ কোটি টাকার ইয়াবা পাচারের মামলায় ৭ রোহিঙ্গার যাবজ্জীবন

কক্সবাজারে ২ কোটি টাকার ইয়াবা পাচারের মামলায় ২ আসামীর যাবজ্জীবন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের ৭০ হাজার ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় ২ জন আসামীকে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ মঙ্গলবার (২৫ জুন) এ রায় প্রদান করেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

দন্ডিত আসামীরা হলেন- নোয়াখালী জেলার নোয়াখালী সদরের ধর্মপুর ইউনিয়নের চর দরবেশ গ্রামের মোঃ ফেরদৌস আলমের পুত্র মোঃ শরিফ উল্লাহ (২৫) এবং ভোলা জেলার চর ফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ চর আইচা ইউনিয়নের চর আইচা গ্রামের আবদুল আজিজ পালোয়ানের পুত্র সাদ্দাম হোসেন (৩১)।

রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামী মোঃ শরিফ উল্লাহ আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং অপর দন্ডিত আসামী সাদ্দাম হোসেন পলাতক রয়েছে।

রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ রেজাউর রহমান রেজা এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মো: শহীদুল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০২১ সালের ৬ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের রামু’র মরিচ্যা যৌথ চেকপোস্টে কক্সবাজার অভিমূখী একটি কর্ভাডভ্যান গাড়িকে (নম্বর : চট্ট মেট্টো ট-১১-৬৫৬২) থামিয়ে কর্তব্যরত রামু ৩০ বিজিবি’র সদস্যরা তল্লাশী করে। তল্লাশীকালে কর্ভাডভ্যানের চালক মোঃ শরিফ উল্লাহ ও হেলপার সাদ্দাম হোসেনের স্বীকারোক্তি মতে কর্ভাডভ্যানের কেবিনের মিটারবক্সের ভিতর থেকে বিজিবি সদস্যরা ৭০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় ৩০ বিজিবি’র নায়েব সুবেদার মোঃ ফোরকান উদ্দিন বাদী হয়ে কর্ভাডভ্যানের ড্রাইভার মোঃ শরিফ উল্লাহ ও হেলপার সাদ্দাম হোসেনকে আসামী করে রামু থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার রামু থানা মামলা নম্বর : ২২, তারিখ : ০৭/০৮/২০২১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৪২৬/২০২১ ইংরেজি (রামু) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৫৯৭/২০২২ ইংরেজি।

বিচার ও রায়

২০২২ সালের ১০ মে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়। মামলায় ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য্য করা হয়।

ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০ (গ) ধারায় আসামী কর্ভাডভ্যান গাড়ির চালক মোঃ শরিফ উল্লাহ ও হেলপার সাদ্দাম হোসেনকে দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।

রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা মূলে দন্ডিত আসামী ড্রাইভার মোঃ শরিফ উল্লাহকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করার মাত্র ২ বছর ১ মাস ১৫ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ রেজাউর রহমান রেজা এ রায় সম্পর্কে বলেন, আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য প্রমাণ, তথ্য উপাত্ত উত্থাপন করে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্র পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আদালতের এ রায়ে রাষ্ট্র পক্ষ সন্তুষ্ট। এ রায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ রায়ে মাদক কারবারীদের কাছে একটা ম্যাসেজ যাবে।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন মাদক, খুন ও চাঞ্চল্যকর মামলা গুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার কিছু ইতিবাচক কার্যক্রম আদালতে এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে।