মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এবং শিশু আদালত-২ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (স্পেশাল পিপি) এর পদটি দীর্ঘ দেড় মাসের বেশি সময় ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে রাষ্ট্র পক্ষের কোন আইনজীবী ছাড়াই আদালতটির কার্যক্রম চলছে।
কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এবং ২ নম্বর শিশু আদালতটি কক্সবাজার জেলার রামু, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া ভৌগোলিক অধিক্ষেত্র নিয়ে গঠিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ আদালতে ১ হাজার ৬০০ এর অধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালত-২ এর স্পেশাল পিপি হিসাবে দায়িত্বে থাকা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো: রেজাউর রহমান রেজার নিয়োগ গত ৬ মে আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ (জিপি/পিপি শাখা) থেকে বাতিল করে তাঁকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নতুন পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নির্মাণ করা হবে সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট : পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি
অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো: রেজাউর রহমান রেজা গত ৭ মে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নতুন পিপি পদে যোগ দেওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এবং শিশু আদালত-২ এর স্পেশাল পিপি’র পদটি শূন্য হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২৬ জুন এ প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত উক্ত ট্রাইব্যুনালে নতুন কোন স্পেশাল পিপি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। উক্ত আদালতে কোন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটরও (এপিপি) দায়িত্বে নাই। ফলে রাষ্ট্র পক্ষের কোন আইনজীবী ছাড়াই জেলা ও দায়রা জজ সম মর্যাদার এ ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতে বিচার কার্যক্রম চলছে।
এতে আদালত পরিচালনায় সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন জটিলতা। রাষ্ট্র পক্ষের সঠিক তথ্য উপাত্ত আদালতে উপস্থাপনের জন্য কোন আইনজীবী না থাকায় ব্যহত হচ্ছে, আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম। ভোগান্তিতে পড়ছে আদালতের বিচারপ্রার্থীরা। মামলা নিষ্পত্তিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার : কক্সবাজারে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান
আদালতে রাষ্ট্র একটি অপরিহার্য পক্ষ উল্লেখ করে কক্সবাজারের একীভূত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সাবেক স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ চৌধুরী কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ দীর্ঘদিন যাবৎ স্পেশাল পিপি’র পদ শূন্য থাকা উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
সরকারি এই কৌঁসুলি বলেন, একটি জেলা ও দায়রা জজ মর্যাদার আদালতে রাষ্ট্র একটি অপরিহার্য পক্ষ। আদালতে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্পেশাল পিপি না থাকায় আদালতে রাষ্ট্র পক্ষে মামলার তথ্য উপাত্ত হয়ত সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়না। এতে ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতের কার্যক্রম বিঘ্ন হয়। অনেকক্ষেত্রে আদালত সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন না।
আরও পড়ুন: বিচার বিভাগীয় স্টাফদের নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে : কক্সবাজারের জেলা জজ
অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর মতে, ন্যায় বিচার ও আদালতে স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘদিন স্পেশাল পিপি’র পদ শূন্য থাকা কোনভাবেই উচিত নয়।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে মামলার অভিযোগ গঠন করা, সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের প্রায় সকল ধাপে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী প্রয়োজন। কিন্তু কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এবং শিশু আদালত-২ এ স্পেশাল পিপি’র পদটি শূন্য থাকায় স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রমে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে। যা বিচারকে বিলম্বিত করবে।
অন্যদিকে, বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে অযথা সংশয় সৃষ্টি হবে এবং ভোগান্তি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদ।