অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আইন অঙ্গনের চারজন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আইন অঙ্গনের চারজন

বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের তিনদিন পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। নতুন এই সরকারে ১৭ জন উপদেষ্টা রয়েছেন, যাদের মধ্যে আইন অঙ্গনের চারজন রয়েছেন।

তাঁরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ।

গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত নয়টার পরে বঙ্গভবনে নতুন সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেন। সেখানে তাদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করা হয়েছে।

এর মধ্যে আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আদিলুর রহমান খানকে। এ এফ হাসান আরিফ পেয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আর সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে দেওয়া হয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম পাঠকদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টার জায়গা করে নেওয়া আইন অঙ্গনের চারজনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিম্নে তুলে ধরা হল।

ড. আসিফ নজরুল

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন আসিফ নজরুল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক।

আসিফ নজরুলের জন্ম ১৯৬৬ সালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম করেছেন।

১৯৯৯ সালে যুক্তরাজ্যের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে আন্তর্জাতিক আইনে পিএইচডি লাভ করেন আসিফ নজরুল।

১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে আসিফ নজরুল সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় কাজ করতেন। তিনি কয়েক মাস সরকারি কর্মকর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবেও কাজ করেছেন।

আসিফ নজরুল একজন জনপ্রিয় কলামিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী। তিনি অনেকগুলো বইয়ের সহলেখক। তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জার্নাল ও বইয়ে সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক আইনি বিষয়ের ওপর গবেষণাপত্র লিখেছেন।

২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের ব্যুরোর সদস্য ছিলেন আসিফ নজরুল। তিনি সুশাসন, ন্যায়বিচারের অধিকার, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইইউ ডেলিগেশন ইন বাংলাদেশ, ইউএনডিপি, এডিবি, ডিএএনআইডিএ, এসআইডিএ, কেয়ার, টিআইবিসহ বিভিন্ন সংস্থার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।

আদিলুর রহমান খান

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হয়েছেন আদিলুর রহমান খান। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান। নাগরিক সমাজের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ১৯৯৪ সালে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

২০১৩ সালের ৫-৬ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে ‘অসত্য-বিকৃত তথ্য প্রচারের’ অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাঁকে ও তাঁর সহকর্মী অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁরা একই বছরের অক্টোবরে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান। ২০২২ সালে সরকার ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন বাতিল করে।

আদিলুর রহমান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের শেষ মেয়াদে আদিলুর রহমান খান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।

এ এফ হাসান আরিফ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের একজন এ এফ হাসান আরিফ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।

তিনি ১৯৭০ সাল থেকে আইন পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন। তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন।

হাসান আরিফ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিম বাংলার কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এর আগে। এর মধ্যে আছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন লিমিটেড এবং গ্রামীণফোন বাংলাদেশ।

তিনি বর্তমানে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমপ্লেক্সের উপদেষ্টা।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সুপরিচিত পরিবেশ অধিকারকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হয়েছেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। পরিবেশবিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী তিনি।

দেশের পরিবেশবিষয়ক নানা বিষয়ে তিনি সব সময় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পরিবেশ-সংক্রান্ত ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাঁকে ২০২১ সালে ‘এশিয়ার নোবেল’ খ্যাত র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশ্বের ‘৪০ পরিবেশবিষয়ক হিরোর’ একজন ছিলেন তিনি।

উন্নয়ন সংগঠন আরডিআরএসের চেয়ারপারসন তিনি। তিনি দেশের একাধিক বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আছেন। এর মধ্যে আছে এফআইভিডিবি, নিজেরা করি, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ব্র্যাক।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ১৯৬৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। আর বেলার সঙ্গে কাজ শুরু করেন ১৯৯৩ সাল থেকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।