বৈষম্য অবসানের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। সোমবার বেলা ১১টা থেকে তারা ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
পরে কল্যাণ ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম আলম ভূঁইয়াসহ একটি প্রতিনিধি দল রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় ১১ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেন প্রতিনিধি দল।
এ বিষয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম আলম ভূঁইয়া জানান, নানা বৈষম্যের বিষয়ে এর আগেও কয়েকবার তারা রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর চিঠি দিয়েছেন। গত ৮ আগস্টও একটি স্মারকলিপি দেন। গতকাল দেওয়া স্মারকলিপি সম্পর্কে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, “আমাদের দাবিসমূহ প্রধান বিচারপতির কাছে তুলে ধরবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন রেজিস্ট্রার জেনারেল।”
স্মারকলিপিতে যেসব দাতি উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো-
১. বিভিন্ন বাসাবাড়িতে নিয়োজিত করা সব কর্মচারীকে প্রত্যাহার করে অফিসে পোস্টিং দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো কর্মচারীকে বাসা-বাড়িতে পোস্টিং দেওয়া যাবে না।
২. প্রশাসনে জুডিসিয়াল অফিসার কমিয়ে ৫ জন করতে হবে এবং প্রমোটি অফিসার পদ বাড়াতে হবে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে একই পদে থাকা অফিসার ও কর্মচারীদের দ্রুত পদোন্নতি দিতে হবে। এ ছাড়া প্রমোটিদের জন্য নতুন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদ সৃষ্টিসহ ডেপুটি রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, সুপারিনটেনডেন্ট, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, কোর্ট কিপার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ সংখ্যা অতি দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি করে এ পদসহ সব পদে জ্যেষ্ঠতা প্রদানসহ বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান বা নির্বাচিত প্রতিনিধি রেখে পদোন্নতির বিধিবিধান দ্রুত সময়ের মধ্যে সময়োপযোগী করতে হবে।
৩. প্রধান বিচারপতির সচিব পদে কবির আহমেদের দায়িত্ব পালনের পর থেকে যারা যারা বিধির বাইরে প্রধান বিচারপতির সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন এবং বর্তমানে প্রমোশন পেয়ে যারা অন্যান্য পদে বহাল আছেন তাদের অব্যাহতি দেয়া হোক।
৪. উভয় বিভাগে অফিসার ও কর্মচারীদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থাসহ প্রাধিকার অনুযায়ী যার যার প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জুডিসিয়াল এবং প্রমোটিদের অফিসারদের সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম বৈষম্য করা যাবে না।
৫. অফিস উপস্থিতি ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে ফিঙ্গার প্রিন্ট পদ্ধতি যেহেতু সব কর্মচারী-কর্মকর্তার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না, সেহেতু এই ফিঙ্গার প্রিন্ট পদ্ধতি থেকে সবাইকে অব্যাহতি দিয়ে সমভাবে পূর্বের হাজিরা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কোনোভখাবেই বৈষম্যমূলক পদ্ধতি বহাল রাখা যাবে না।
আরও পড়ুন: এক দফা দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ
৬. ছুটি-ছাটার বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত একটি উদ্যোগ নীতিমালা করে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ছুটি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনোরকম বৈষম্য ও হয়রানি করা যাবে না।
৭. প্রসেডিং সংক্রান্ত ফাইলগুলো নিয়মানুযায়ী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই স্বচ্ছতার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং ইতিমধ্যে প্রসেডিং সংক্রান্ত যে ফাইলগুলো তিন মাসের অধিক সময় ধরে পড়ে আছে সেগুলো তিন দিনের মধ্যে উদারনীতিতে নিষ্পত্তি করতে হবে।
৮. সুপারিনটেনডেন্ট ও হিসাবরক্ষক কর্মকর্তার পদ প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করতে হবে।
৯. কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্ধারিত অফিস সময়সূচির বাইরে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না। অফিস কর্মঘণ্টার বাইরে কিংবা অন্যান্য ঘোষিত সরকারি ছুটির দিনে যদি কোনো কাজ করার একান্তই প্রয়োজন হয়; তবে যথাযথ সম্মানি ও অন্যান্য সুযোগ- সুবিধা নিশ্চিত করে কাজ করার জন্য অনুরোধ করতে হবে। পূর্বের ন্যায় অফিস সময়সূচি আপিল বিভাগে সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এবং হাইকোর্ট বিভাগে সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত করতে হবে।
১০. প্রশাসন বরাবর করা কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দরখাস্ত তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্তের সিদ্ধান্ত দরখাস্তকারীকে সিদ্ধান্ত আকারে জানাতে হবে।
১১. বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। কোনো প্রকার তদবির বিবেচনা করা যাবে না। পরীক্ষা পদ্ধতি অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে।