কুমিল্লার মোগলটুলী এলাকায় ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তদের হামলায় গুলিবিদ্ধ আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ মারা গেছেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন।
আবুল কালাম আজাদ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা শাখার যুগ্ম সম্পাদক এবং কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার কাজীরগাঁও এলাকায়।
সহকর্মীরা জানান, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিকেলে নগরীর প্রতিটি সড়কে বিজয় মিছিলের পাশাপাশি নানা সহিংসতাও চলে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কুমিল্লার আদালতে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ে।
এসময় সেখানে ছুটে যান জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি কাইমুল হক, তাঁর ছেলে শাফিউল হক, আরফানুল হক, আবুল কালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
পরে তাঁরা মাগরিবের নামাজের জন্য নগরীর মোগলটুলী এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাঁদের ওপর হামলা ও গুলি করে। এ ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ কোমরে গুলিবিদ্ধ হন।
স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আবুল কালামকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে চিকিৎসকেরা আজাদকে মৃত ঘোষণা করেন।
আইনজীবী কাইমুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘আদালতে সহিংসতা থামিয়ে ফেরার পথে বিনা উসকানিতে কাউন্সিলর রায়হানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ এবং ককটেল ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন আমাদের সহকর্মী কালাম। এ সময় আমরা অনেকেই আহত হই।’
রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন বলেন, আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বুধবার রাতে তাঁর সহকর্মী জসিম বাদী হয়ে কাউন্সিলর রায়হানসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন।
মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তবে তিনি (কালাম) মারা যাওয়ায় মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত হবে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জানাজায় সহকর্মী হত্যার বিচার চাইলেন আইনজীবীরা
এদিকে আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ এর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলার আইনজীবীরা। শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লা জজকোর্ট প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা শেষে এ দাবি জানান তাঁরা।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আবুল কালাম আজাদ একজন বিচক্ষণ আইনজীবী ছিলেন। যারা আবুল কালাম আজাদকে হত্যা করেছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আ হ ম তাইফুর আলম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্মমতার বলি হয়েছেন আমাদের সহকর্মী আবুল কালাম আজাদ। তাঁকে নগরীর মোগলটুলী এলাকায় নির্মমভাবে পিটিয়ে ও গুলি করে আহত করা হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি কাইমুল হক রিংকু দাবি করেন, ‘গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিকেলে নগরীর প্রতিটি সড়কে বিজয় মিছিলের পাশাপাশি সহিংসতাও চলেছে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কুমিল্লা আদালতে হামলার খবর পেয়ে আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন আইনজীবী সেখানে ছুটে যান। পরে তাঁরা মাগরিবের নামাজ আদায়ের জন্য নগরীর মোগলটুলী এলাকায় গেলে সিটি কাউন্সিলর রায়হানের নেতৃত্বে তাঁদের ওপর হামলা ও গুলি করা হয়।’
জানাজায় উপস্থিত হয়ে আরও বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পিপি জহিরুল ইসলাম সেলিম, কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, শতাধিক আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।