১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের প্রথম তফসিল অনুযায়ী ত্রিপুরা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও মালদা পূর্ববঙ্গ বা বর্তমান বাংলাদেশের অংশ হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও উক্ত ভূখণ্ডগুলো কেন পূর্ববঙ্গ বা বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হলো না তা জানতে বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশের নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও পাকিস্তান হাইকমিশনারের নিকট আবেদন করা হয়েছে।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে উক্ত আবেদন প্রেরণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান। আবেদনের সাথে ব্রিটিশ আইন সংক্রান্ত সরকারী ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত “ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ (Indian Independence Act, 1947)” এর অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ৪ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এই আবেদন করা হয়েছে। অপরদিকে “ইন্টারন্যাশনাল কভিনেন্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস”, ১৯৭৬ এর অনুচ্ছেদ ১৯(২) অনুযায়ী বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও পাকিস্তানের হাইকমিশনার বরাবর এই আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সাথে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ভারত ও পাকিস্তান কোন যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেনি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে “ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭” নামে একটি আইন পাশ হয়। উক্ত আইনের মাধ্যমেই ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম লাভ করে। তৎকালীন সময়ে পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
আরও পড়ুন: সাবেক বিচারপতি মানিকের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন, যা জানা গেল
আবেদনে আরো বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকার শেষ দিকে পূর্ববঙ্গের বাঙালি ও পাঞ্জাবের শিখদের প্রতি বেশ সহানুভূতিশীল ছিল । কারণ এই পূর্ববঙ্গের বাঙালি ও পাঞ্জাবের শিখরা ব্রিটিশ ভারতের অন্যান্য অঞ্চল কর্তৃক ব্যাপকভাবে শোষিত ও নির্যাতিত হয়েছিল। এসব কারণে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট “ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭” এর প্রথম ও দ্বিতীয় তফসিলে পূর্ববঙ্গ বা বর্তমান বাংলাদেশ এবং পাঞ্জাব অঞ্চলের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে ভূখণ্ড উল্লেখ করে দেয়।
উক্ত ভারত স্বাধীনতা আইনের প্রথম তফসিল অনুযায়ী ত্রিপুরা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও মালদা সুস্পষ্টভাবে পূর্ববঙ্গ বা বর্তমান বাংলাদেশের অংশ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, ভারত স্বাধীনতা আইন,১৯৪৭ এর প্রথম তফসিলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ বা বর্তমান বাংলাদেশ এই ত্রিপুরা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও মালদার দখল বুঝে পায়নি।
উক্ত আবেদনে বলা হয়েছে, “ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭” হলো ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার দলিল কারণ এই আইনের মাধ্যমেই ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম ও স্বাধীনতা লাভ করেছে । উক্ত আইনের প্রথম তফসিলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও ত্রিপুরা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও মালদার দখল আমাদের পূর্ববঙ্গ বা বর্তমান বাংলাদেশ বুঝে পায়নি ।
আরও পড়ুন: সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার
তাই উক্ত আবেদনে বাংলাদেশ সরকার, ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও পাকিস্তান হাইকমিশনারের নিকট জানতে চাওয়া হয়েছে যে, ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ এর প্রথম তফসিলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) কেন এই ত্রিপুরা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও মালদার দখল বুঝে পায়নি? এছাড়া উক্ত ভূখণ্ড গুলো যদি বিনিময় (Exchange) হয়ে থাকে, তাহলে এগুলোর বিনিময়ে পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) কোন কোন নতুন ভূখণ্ড পেয়েছে? পাশাপাশি উক্ত আবেদনে আরো জানতে চাওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) কিভাবে আইন অনুযায়ী তার ন্যায্য ভুখন্ড সমূহ তথা ত্রিপুরা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও মালদার দখল বুঝে পেতে পারে ?
এখানে উল্লেখ্য যে, উক্ত ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ এর ধারা ৩ অনুযায়ী সিলেট নিয়ে গণভোটের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল যে, সিলেট পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) সাথে থাকবে নাকি আসামের সাথে থাকবে। উক্ত গণভোটের মাধ্যমে সিলেটের জনগণ পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) সাথে সংযুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
উক্ত ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ এর ধারা ৩ অনুযায়ী শুধুমাত্র সিলেট অঞ্চলকে গণভোটের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া উক্ত আইনের প্রথম তফসিল অনুযায়ী সকল ভুখন্ডই পূর্ববঙ্গ বা বর্তমান বাংলাদেশের ন্যায্য ভুখন্ড । সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ত্রিপুরা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও মালদা হলো পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশের ন্যায্য ভূখন্ড ।
আবেদন পাওয়ার ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ, ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও পাকিস্তান হাইকমিশনারকে জবাব দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।