সিলেট সীমান্তে আটক সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (৭৪) এখনো হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ রোববার (২৫ আগস্ট) আট সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, তিনি (শামসুদ্দিন) সকালে হালকা তরল খাবার খেয়েছেন। এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন। যদি সব ঠিকঠাক থাকে, হয়তো দুই-চার দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া যাবে।
এর আগে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় গত শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে স্থানীয় জনতার সহায়তায় আটক করে বিজিবি। পরদিন শনিবার সকালে তাঁকে কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল বিকেলে আদালতে হাজির করলে সিলেটের জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট–১ আলমগীর হোসাইন তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতে প্রবেশের সময় আদালত প্রাঙ্গণে থাকা দলবদ্ধ কিছু ব্যক্তি শামসুদ্দিন চৌধুরীকে বেধড়ক কিলঘুষি মারেন। অনেকে ডিম ছোড়ার পাশাপাশি জুতাও নিক্ষেপ করেন। কেউ কেউ শামসুদ্দিন চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে কটূক্তিমূলক স্লোগানও দেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে জখম করেন। এসব দলবদ্ধ ব্যক্তির আক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কোনোরকমে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে আদালত ভবনে ঢোকান।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় বিচারকের উপর হামলাকারীকে গণধোলাই
কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিকেলে আদালত থেকে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে শহরতলির বাদাঘাট এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাঁকে ‘আনফিট’ উল্লেখ করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী সন্ধ্যায় শামসুদ্দিন চৌধুরীকে হাসপাতালে আনা হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শামসুদ্দিন চৌধুরীর চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শিশির চক্রবর্ত্তীকে সভাপতি করে আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাঁরা সকালে শামসুদ্দিনের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন।
মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন রেডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আশিকুর রহমান মজুমদার, অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. শাহ ইমরান, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. মোখলেছুর রহমান, সার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ মাহমুদ, অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খায়রুল বাশার, ইউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম ও প্যাথলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট কান্তা নারায়ণ চক্রবর্তী।
মেডিকেল বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শামসুদ্দিন চৌধুরী হাসপাতালের চতুর্থ তলায় সার্জারি ওয়ার্ড ৪-এর অধীনে আইসিইউ-২-এ ভর্তি আছেন। গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে তাঁর স্কোটাল ইনজুরির (অণ্ডকোষে আঘাত) অস্ত্রোপচার হয়।
বোর্ডের এক সদস্য বলেন, শামসুদ্দিন চৌধুরীর যে অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই আঘাতটি নতুন। এর বাইরে বড় ধরনের জখম তাঁর শরীরে ছিল না।
যোগাযোগ করলে মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক শিশির চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘আমরা দেখেছি। মূলত তাঁর হার্টে সমস্যা আছে। ১০ বছর আগে তিনি বাইপাস করেছিলেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে। এখন তিনি (শামসুদ্দিন) ভালো আছেন।’